হাওর বাংলা ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়ায় ৪৭তম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে “বঙ্গবন্ধু ও ধর্ম নিরপেক্ষতা – সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৌলবাদ প্রতিরোধ ” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৭ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে সিডনির লাকেম্বায় একটি রেস্টুরেন্টে (ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া চ্যাপ্টার একাত্তরের ঘাতক দালান নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার আয়োজনে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালান নির্মূল কমিটি অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডাঃ একরাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন- ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা জব্বার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরোমা দত্ত এম,পি এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান রিতু, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্র লীগের প্রাক্তন সভাপতি শফিকুল আলম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক দিদার হোসেনসহ প্রমুখ।
অস্ট্রেলিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান রিতু, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্র লীগের প্রাক্তন সভাপতি শফিকুল আলম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক দিদার হোসেন, সংস্কৃতি সম্পাদক ফয়েজ ওসমান এবং বাংলাদেশ ছাত্র লীগ অস্ট্রেলিয়া শাখার সাবেক সভাপতি মুহিদুজামান সূজন । অনুষ্ঠানে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হারুনূর রশীদ, হাসান শিমুল ফারুক রবিন, ইঞ্জিনিয়ার সাজ্জাদ সিদ্দিকী, কাজী আশফাক রাহমান বক্তব্য রাখেন । অনুষ্ঠানের জুমসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহরিয়ার রহমান। অন্যানদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল হক,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ত্রাণ উপকমিটির সদস্য ডাঃ মির্জা খালেদ আল আব্বাস , সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর কেনেডি উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি যে পথ দেখিয়ে গেছেন সেই পথেই আমরা চলছি। স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে তাঁর কর্মজীবন আমাদের কাছে পাথেয়। ইসলামিক রিপালিক পাকিস্তানকে পরাস্ত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা পিপলস রিপাবলিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এসব মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ঘটনা হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ বাঙালি জাতীয়তাবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেভাবে শেকড় গেঁড়েছে বাংলাদেশে তা উপড়ে ফেলা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে যে স্বাধীনতাবিরোধীদের মৌলবাদী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি দীর্ঘদিন যাবত মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।’
তিনি বলেন, ‘বিটিআরসি’র মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের আপত্তিকর পোস্ট ও কমেন্ট মুছে ফেলার জন্য একটি অ্যাপস তৈরির পরিকল্পনা করছি। এখন ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্ট রিপোর্ট করে তা মুছে ফেলার ক্ষেত্রে আগে আমাদের সফলতার হার ছিল ৫ ভাগ, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ ভাগে। মৌলবাদী সন্ত্রাস নির্মূলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অগ্রণী। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে তার মাধ্যমে মৌলবাদী সন্ত্রাস নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এ বিষয়ে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে পারি।
আলোচনা সভায় অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান রিতু বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ১৯৭১ সালের এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল দেশ স্বাধীনের জন্য, ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হারুনূর রশীদ বলেন, মৌলবাদী চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ সামাজিক গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীতে হিংসা এবং বিভাজনের রাজনীতির জন্ম দিয়েছে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। প্রগতিশীল সকলকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে না তোলা গেলে এদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব না।
ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, সাইবার ক্ষেত্র জিহাদ আকৃষ্ট করার নতুন একটি প্লাটফর্ম। জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাইবার কাউন্টার জিহাদ কেমন করে করতে হবে তার একটি রূপরেখা আমাদের তৈরি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমাদের সামনে এগোতে হবে। জঙ্গি গোষ্ঠীরা অনলাইনে একের পর এক জিহাদের মোটিভেশন দিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে প্রতিহত করতে হলে সরকার এবং আমাদের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকা দরকার।
অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদার হোসেন বলেন, মৌলবাদ ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অস্থির করে তোলা। ডিজিটাল আইনের প্রয়োজন আছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য।
অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি সম্পাদক ফয়েজ ওসমান বলেন, বর্তমানে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সুসংগঠিত এবং বিস্তৃত। সেই তুলনায় অসাম্প্রদায়িক শক্তির পাল্টা জবাব এই মাধ্যমে সুসংগঠিত নয়। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদ উস্কানীমূলক অপতৎপরতার জন্য শাস্তির বিধান ও প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং পৃষ্ঠপোষকতার বিধান থাকতে হবে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল তালুকদার বলেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে একটি গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প সামাজিক মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে। এ অশুভ চর্চা আর চলতে দেয়া যায় না।
সভাপতির ভাষণে সংগঠনের সভাপতি ডাঃ একরাম চৌধুরী বলেন, তিন দশকেরও অধিককাল পূর্বে আমরা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম তার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং স্বাধীনতাবিরোধী গণহত্যাকারীদের ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ কল্যাণ রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলা। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিভিন্ন মাধ্যমে ইসলামের দোহাই দিয়ে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন মত এবং ভিন্ন জীবনধারার অনুসারী নাগরিকদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অমুসলিম ও মুক্তচিন্তকদের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার প্রতি তারা ক্রমাগত বিষোদগার করছে। একটি কথা পরিষ্কারভাবে মনে রাখতে হবে যে ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যোগদান করবেন। অনুষ্ঠানটি জুম এবং ফেসবুকে লাইভ এর মাধ্যমে প্রচারিত হয়।