টিটু দাস : কিশোরগঞ্জের হাওরের ইটনা উপজেলার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের চার তলার ছাদে দুইটি মাটির চুলায় রান্না করছেন লক্ষী রানী বর্মণ। এক চুলায় ভাত ও অন্য চুলায় মাছের তরকারি। ইটনা সদর ইউনিয়নের আনন্দপাড়ার লক্ষী রানী বর্মণের সংসারে দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও দুই পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতিনী নিয়ে সংসার। বন্যার পানি ঘরে ভেতরে প্রবেশ করলে শনিবার বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তারপর থেকে এখানেই বসবাস লক্ষী রানী পরিবারের।
এ আশ্রয় কেন্দ্রে শুধু লক্ষী রানী বর্মণ না বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ইটনার সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও শনিবার থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
লক্ষী রানী বর্মণ বলেন, অনেক বছর আগে আমাদের ঘরে পানি ঢুকেছিল। কিন্তু এবার আষাঢ় মাসের শুরুতেই ঘরে কোমড় পানি। তারপর ঘরের সব জিনিসপত্র এখানে (আশ্রয় কেন্দ্রে) এসে বসবাস করছি। পানি না কমলে এখানেই কষ্ট করে থাকতে হবে।
ইটনা সদর ইউনিয়নের হরিণপুর ও ফরিদপুর গ্রামের কয়েকজন বলেন, এবারের পানির গতি অনেক বেশি। দেখতে দেখতে আমাদের বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তারপর গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে কলেজে আশ্রয় নিয়েছি। পানি যত তাড়াতাড়ি কমবে তত আমাদের মঙ্গল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উজানের ঢলের পানি প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার থেকে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে দ্রুত গতিতে পানি বাড়তে থাকে। তারপর শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলাগুলোর কয়েক বসতবাড়ি, বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এসব এলাকার বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে জেলার হাওর উপজেলা হিসাবে পরিচিত ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, তাড়াইল, নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলার মানুষ। এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের ৮টি উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি আরো বাড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলেছেন স্থানীয়রা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত দুই হাজার চারশো প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৪০ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।