সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / আজকের খাবারের জিনিসপত্র পাইয়্যা রমজানের খুশি টের পাইতাছি

আজকের খাবারের জিনিসপত্র পাইয়্যা রমজানের খুশি টের পাইতাছি

নিজস্ব সংবাদদাতা : সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ও আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় কিশোরগঞ্জের গভীর হাওরের তিন উপজেলায় করোনা ভাইরাসের কারণে আর্থিক সংকটে থাকা অসহায় হতদরিদ্র ও কর্মহীন ছয়শত পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী উপহার দিয়েছেন।

হাওরের তিনটি উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন আয়োজনটি সাধারণ ও হাওরের গরীব জনগোষ্ঠির মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। গভীর হাওরের তিন উপজেলায় সুবিধাবঞ্চিত ও অতিদরিদ্র ছয় শতাধিক পশ্চাৎপদ নারী-পুরুষের মধ্যে ১০ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি পিয়াজ, এক কেজি উন্নতমানের ডাল, এক কেজি লবন, এক লিটার তেল বিতরণের মধ্য দিয়ে রমজানের আনন্দ ও অভাবী মানুষের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার এক অন্যরকম আনন্দঘন অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষ যোগদান করে। আগত বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন এই খাদ্য সামগ্রী প্রদানের মহতী অনুষ্ঠানকে স্বাগত জানান।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বসত বাড়ির সামনের মাঠে দুইশত কর্মহীন অভাবী পরিবারের নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে উপহার সামগ্রী গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এ সময় উপস্থিত থেকে নিজ হাতে এসব দরিদ্র পরিবারের নারী-পুরুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রভাংশু সোম মহান, আল খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার তারেক মাহমুদ সজীব, সমকালের সহকারি সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ, সমকালের কিশোরগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মিঠামইন থানার ওসি মো. জাকির রব্বানী, নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলের কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি টিটু দাস, সমকাল সুহৃদের সাধারণ সম্পাদক আসলামুল হক আসলাম, সিনিয়র সদস্য মো. জহিরুল ইসলামসহ প্রমুখ। বাড়ির সামনে খোলা মাঠে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। পরে ট্রাকযোগে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হাওরের ইটনা উপজেলায়। ইটনা উপজেলার ডাক বাংলা সংলগ্ন মাঠে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত কর্মহীন দরিদ্র দুইশত পরিবারের নারী পুরুষদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। আর্থিক সংকটে থাকা অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের হাতে এসব খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন। এমপি তৌফিকসহ এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিসা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

পরে দুুপুর দুইটায় হাওরের রানী খ্যাত অষ্টগ্রাম উপজেলার ডাক বাংলা মাঠে অষ্টগ্রামের ৭টি ইউনিয়ন থেকে আগত দুই‘শ কর্মহীন দরিদ্রকে খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুর ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চুসহ উপজেলা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, দেশের সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত এলাকা হাওর। কেভিড-১৯ এর প্রার্দুভাবের কারণে শ্রমিক শ্রেণিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কোন রোজগার না থাকায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ অবস্থায় তাদের রোজার মাসে কোন আনন্দ নেই। কারণ তিনবেলা খাবার নেই, নেই রমজানের জন্য ব্যতিক্রর্মী কোন খাদ্যের সংস্থান। রমজানকে কেন্দ্র আজকের এই মহৎ আয়োজন হাওরের কয়েক’শ মানুষের মধ্যে রমজানের প্রকৃত আনন্দ যোগ করেছে। তাই আল খায়ের ও সমকালকে ধন্যবাদ জানাই।

স্বাগত বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম আবেদ বলেন, সমকাল সব-সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে আর্ত-মানবতার সেবায় কাজ করতে আগ্রহী। তারই ধারাবাহিকাতায় আজকের এই করোনার প্রার্দুভাবের সময় আবারও মহতী ও মানবিক উদ্যোগে আল খায়েরের সাথে সমকালও অংশীদার হয়েছে। তিনি আল-খায়ের ফাউন্ডেশনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কিশোরগঞ্জসহ সারা দেশে এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার তারেক আহমেদ সজিব বলেন, বাংলাদেশসহ ৫৪টি দেশে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন আর্ত-মানবেতায় কাজ করে আসছে। ২০১৬ সালের চৈত্রের বন্যায় কিশোরঞ্জের হাওরাঞ্চলে সমুদয় বোরা ধান তলিয়ে যাওয়ায় সুহৃদকে সাথে নিয়ে আমরা হাওরের ইটনা উপজেলার বাদলা গ্রামের কোরবানি বঞ্চিত দুস্থদের গরু জবাই করে রান্না করে কোরবানির গোস্ত সবাইকে খাওয়েছি। আল- খায়ের ফাউন্ডেশন মানবিক আবেদনে সব-সময় দরিদ্র জনগনের পাশে থাকে। এবার করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে হাওরের মানুষ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন বরছে। তাদেরমুখে রমজানে কিছুটা আনন্দ স্বস্তি আল খায়ের ফাউন্ডেশন আবারও এগিয়ে এসেছে। আল খায়ের ফাউন্ডেশন সব-সময় হাওরের মানুষের সাথে রয়েছে। ভবিষ্যতে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জে কাজের পরিধি আরও বৃদ্ধি করবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত দুস্থদের মুখে হাসি দেখে সত্যি ভাল লাগছে।

খাদ্য সামগ্রী প্রাপ্ত মিঠামইন উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আজিজুন্নেছা, ইটনার জয়সিদ্ধির রহমান মিয়া, মধ্যপাড়া গ্রামের আসমা বানু , অষ্টগ্রামের বাঙ্গালপাড়ার লুৎফুনচ্ছো তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ফাগুল মাস থেকে বৈশাখ মাসে করোনার ভয়ে হাওরে কাজ না থাকায় অভাবে থাইক্যা থাইক্যা ঈদের খুশি কারে কয় হেইডা ভুইল্লা গেছিলাম। রমজান মাসে অভাব আর অভাব। সেহরিতে খুব অসুবিধা ছিল। আজকের খবারের জিনিষপত্র পাইয়্যা রমজানের খুশি টের পাইতাছি। যারা এইতা দিছে আল্লা হেরার ভালা করুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *