তাফসিলুল আজিজ : কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা নতুন সড়কের পাড় ঘেঁষে মাছ চাষের জন্য কয়েকটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এ সড়কটি ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে গত রোববার বালিখলা ঘাটে এক জনসভায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ মো. রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপদ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ শহর থেকে হাওরের দুই উপজেলা ইটনা ও মিঠামইনে যাওয়ার জন্য করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের রৌহা এলাকা থেকে সুতারপাড়া ইউনিয়নের বালিখলা ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় অন্তত ছয়জন বাসিন্দা বলেন, কিশোরগঞ্জ শহরের সাথে হাওরে সহজ যোগাযোগের জন্য সুন্দর এ সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এ সড়ক ধরেই ফেরি করে গাড়ি পাড় হয়ে হাওরাঞ্চলে যেতে হবে। এটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। কিন্তু বছর না ঘুরতেই রৌহা থেকে বালিখলা যেতে সড়কটির বাম পাশ ঘেঁষে পুরান চামড়া এলাকায় ৮ থেকে ১০টি মাছ চাষের পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে নতুন নির্মিত এ সড়কটির পাড় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া বর্ষার সময় এ সড়কের দুই পাশে পানি থাকায় এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো দর্শনার্থী এখানে ভিড় করেন। তাই প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এ সড়কটির সৌন্দর্য রক্ষার্থে এবং পুকুর খননের কারণে সড়কের পাড় যাতে ভেঙে না পড়ে সেদিকটা খেয়াল রেখে এ কাজ বন্ধ করা।
এ সড়ক বেয়ে হাওরাঞ্চলে গাড়ি যাওয়ার ফেরি উদ্বোধনকালীন সময়ে গত রোববার বালিখলা ঘাটে এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এ সড়কটি দিয়ে আসার সময় সড়কের পাড় ঘেঁষে পুকুর খননের কাজ দেখে তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। তিনি বলেন, এ সড়কটি এলাকাবাসীসহ হাওরাঞ্চলের লাখো মানুষের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি আপনাদের সম্পদ। তাই এটি রক্ষা করার দায়িতও আপনাদের। ‘আমি আশা করব, আপনার যারা পুকুর খনন করছেন, তাঁরা দয়া করে সড়ক থেকে একটু দূরে এ খনন কাজ করবেন। যাতে সড়কটির কেনো ক্ষতি না হয়।’ এসময় তাঁর পাশে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী ও জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক তাঁর বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামে এ সড়কটির নামকরণের প্রস্তাব জানিয়ে এ সড়ক দিয়ে যাতে কোনো বাস, ট্রাক বা বড় গাড়ি প্রবেশ করে সড়কটি নষ্ট না করতে পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখার জন্য স্থানীয়দের নির্দেশনা দেন।
স্থানীয় সুতারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ বলেন, প্রায় তিন মাস আগে থেকে এ সড়কের পাড় ঘেঁষে পুরান চামড়া এলাকায় ৮ থেকে ১০টি পুকুর খননের কাজ করছেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। সড়কের পাড় যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে তাই তিনি সড়ক থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খনন কাজ করতে তাঁদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন।
কিশোরগঞ্জ সওজের উপসহকারি প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কিশোরগঞ্জ শহর থেকে করিমগঞ্জ হয়ে চামড়া বন্দর পর্যন্ত যে আঞ্চলিক সড়ক গেছে সে সড়কের ডান পাশ দিয়ে নিয়ামতপুরের রৌহা হতে পুরান চামড়া হয়ে বালিখলা ঘাট পর্যন্ত এ সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এটি ১৮ ফুট পিচ ঢালাইসহ ২৮ ফুট প্রশ্বস্ত। এ সড়ক নির্মাণ করতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। গত বছরের মে মাসে মাত্র ৯ মাস আগে এ সড়কটি উদ্বোধন করা হয়।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, যদিও এ এলাকায় সড়কে একোয়ারের জায়গা কম তবু সাংসদ যখন এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। তাই সড়কের পাড় ঘেঁষে যেসব পুকুর খনন করা হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন। তাঁরা নতুন এ সড়কের কোনো ক্ষতি হতে দিবেন না।