টিটু দাস, কিশোরগঞ্জের হাওর ঘুরে: হাওর শব্দটি শুনলেই অনেকেই মনে করেন হাওর মানে সাগর। অবশ্য সাগরের সঙ্গে হাওরের একটা মিলও রয়েছে। সাগর থেকে সায়র, পরে আরো বিবর্তিত হয়ে সায়র থেকে হাওর শব্দের উৎপত্তি। আর হাওর বর্ষাকলে সাগরের মতোই দেখায়। এ সময় বিশাল হাওর এলাকা পানির নিচে ডুবে থাকে, আর ভেসে থাকে হাওরের গ্রামগুলো। আবার শুকনো মৌসুমে পানি সরে গিয়ে হাওর হয় কৃষিজমি।
কিশোরগঞ্জের হাওরের বিভিন্ন জায়গায় এক সময় ঘন জঙ্গল ছিল। বর্তমানে হাওরে জঙ্গলের দেখা মেলা দুস্কর। কিন্তু সম্প্রতি হাওর বাংলার চোখে ধরা পড়েছে প্রায় একশ’ একরের এক বিশাল জঙ্গল বা বন। স্থানীয়রা এ জঙ্গলকে বলেন শিমুলবাঁকের জঙ্গল বা রাংসার বন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের মূলত হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম-ইটনা-মিঠামইন-নিকলী। হাওরের এসব উপজেলার নিম্ন ভূমিতে প্রায় ১৫ বছর আগে বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গল ছিল। বর্ষার শুরুর দিকে হাওরের মানুষ পানির ঢেউ থেকে গ্রামগুলো রক্ষার জন্য এসব জঙ্গল থেকে ছাইল্যা নামে ঘাস সংগ্রহ করত এবং ছাইল্যা ঘাস আর বাঁশ দিয়ে ভাসমান গ্রাম রক্ষা বেড়িবাঁধ তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে হাওরের এ চার উপজেলার জঙ্গল বা বন হারিয়ে গেছে।
হাওরের চার উপজেলা ঘুরে শুধু ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি ইউনিয়নে শিমুলবাঁক গ্রামের পাশে একশ’ একরের একটি জঙ্গলের দেখা মিলেছে। সাত কিলোমিটার দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে হাওরের ফসলি জমির মাঝে বৃক্ষ সমারোহে কোন গ্রাম। কিন্তু এটা একশ’ একর জায়গার মাঝে একটি জঙ্গল। স্থানীয় লোকজন এ জঙ্গলকে শিমুলবাঁকের জঙ্গল বা রাংসার বন হিসেবে চেনে। এ জঙ্গল বা বনের পশ্চিম দিকে ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাঁক গ্রাম, উত্তর দিকে ইটনা উপজেলার হাতকুবলা আর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের ভজকপুর গ্রাম।শিমুলবাঁকের জঙ্গল।
শিমুলবাঁকের জঙ্গল বা রাংসার বনের রয়েছে পঞ্চাশের অধিক হিজল, কড়চ গাছ, বরুণ গাছ এবং ৪ থেকে ৫ ফুট উচু ছাইল্যা ঘাস, পালই গাছ। এ জঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ওষুধি গাছও। এক সময় শীতকালে এই হাওরে উড়ে আসতো সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের পরিযায়ী পাখিরা। কিন্তু বর্তমানে জঙ্গল বা বন না থাকায় অতিথি পাখি খুব একটা আসে না হাওরে। শিমুলবাঁক গ্রামের বাসিন্দা জসিম দাদ খান ও আঙ্গুর খান বলেন, হাওরের একমাত্র জঙ্গল বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এ জঙ্গল রক্ষায় সরকারে এগিয়ে আসা দরকার।শিমুলবাঁকের জঙ্গল।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে ও কিশোরগঞ্জ-৪ (অষ্টগ্রাম-ইটনা-মিঠামইন) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, হাওরে এক সময় প্রচুর সংখ্যায় হিজল, কড়চ গাছ ছিল। এই হাওর ছিলো অতিথি পাখির অভয়ারণ্য। কিন্তু বর্তমানে হাওরে তেমন অতিথি পাখির দেখা যায় না, গাছের সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। তিনি আরও জানান, হাওরে গাছের চাহিদা পূরণ করতে বর্তমান সরকার ও হাওর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প (হিলিপ) এখন হাওরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগাচ্ছে।
ছবি: টিটু দাস