টিটু দাস, মিঠামইনের কামালপুর গ্রাম ঘুরে এসেঃ
কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা। পানিমূল জনপদের নাম কামালপুর। বর্ষায় হাওরের চারদিকে থাকে পানি আর পানি, শুকনায় হাওরজুড়ে সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির অপরূপ শোভন আবহ এখানকার জনপদে। এই হাওরের কামালপুর গ্রামে জন্ম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের। কামালপুর গ্রামের পরিচিতি রাষ্ট্রপতির গ্রাম হিসেবে।
কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চল মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছেন দুই বারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বাবা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতা মোছা. তমিজা খাতুনের সন্তান।
একদা হাওরের অথৈ পানিতে সাঁতার কেটে এবং ক্ষেতের আইল ছড়ে বেড়ে উঠেছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে কামালপুরে। এখানেই তাঁর শেকড়, এখানের জল হাওয়ার শৈশব তাঁকে টানে। তাই রাষ্ট্রপতি মাটির টানে বারবার ছুটে আসেন নিজ জন্মভিটা কামালপুরে। কেননা আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর যতবার হাওরাঞ্চলের মিঠামইন সফরে এসেছেন ততবারই রাত্রিযাপন করেছেন মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে।
দেশের রাষ্ট্রপতির বাড়ি কামালপুর গ্রামে এ নিয়ে গ্রামবাসি গর্ববোধ করেন। রাষ্ট্রপতির গ্রামের মানুষও এমন পরিচয়ে আনন্দ পান।
রাষ্ট্রপতির ছেলেবেলার সাথী হাজী মোনতাজ উদ্দিন ও দারগ আলী বলেন, বাল্যবন্ধু যখন রাষ্ট্রপতি তখন একটা গর্বতো বুকে থাকে। মানুষকে বলি দেশের রাষ্ট্রপতি একদা আমাদের খেলার সাথী ছিল। কত সুখের ছিল সেই ছেলেবেলা। এই বড় বেলায় এসে এখন আর তেমন দেখা হয়না। তবে সে মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়িতে আসলে তারে দেখতে যাই। সুখ লাগে। মায়া লাগে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাষ্ট্রপতির গ্রামের বাড়ির প্রধান গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সাইড পাকা টিনের বাংলো টাইপ ঘর। এই বাংলোর বারান্দায় রয়েছে একদিকে টাইলসের তৈরি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যূরাল। তার উল্টো দিকে দুই বারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ম্যূরাল।
টিনের তৈরি বাংলো ঘর পেরিয়ে উঠানো প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল বিশালাকৃতির উঠান। উঠোনের চারদিকে সাইড পাকা কয়েকটি টিনের ঘর। সাইড পাকা টিনের তৈরি এসব ঘরের মধ্যে একটি দোতলা টিনের ঘর রয়েছে। এ ঘরটির সামনের ফলকে লেখা রয়েছে মো. আবদুল হামিদ, এডভোকেট। এ ঘরের দু’তলার একটি কক্ষে রাষ্ট্রপতি রাত্রিযাপন করেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ির সাথে এলাকাবাসীর সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে টাইলসের তৈরি মসজিদ। এ মসজিদে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ নামাজ আদায় করে থাকেন।
বাড়ির কেয়ারটেকার নাসির উদ্দিন বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মিঠামইন সফরে এলে এ ঘরের দোতলার একটি কক্ষে তিনি রাত্রিযাপন করেন। তিনি আসলেই গাঁয়ের মানুষজন ছুটে আসেন। তিনি খুব মিশুক মানুষ। সবার সঙ্গে কথা বলেন। খোঁজ খবর নেন। তিনি আসলেই কামালপুরে একটা আনন্দ বিরাজ করে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ঘনিষ্টজন সূত্রে জানা গেছে, তিনি কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে ভৈরব কেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে নিকলী জেসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। গুরুদয়াল সরকারী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ডিগ্রী শেষ করেন। কলেজ জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির যুক্ত হয়ে গুরুদয়াল কলেজ ভিপি নির্বাচিত হন। পরে ঢাকার সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি শেষ করে রাজনীতির পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন এবং জেলা বার সমিতির পঞ্চম বারের মতো সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম-ইটনা-মিঠামইন থেকে ৭ম বার সংসদ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার হয়ে ২০১১ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১১ জুলাই ডেপুটি স্পীকার থেকে এ বছরের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতের ২০০১ সালের ১ নভেম্বর বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি ২য় বারের মতো স্পীকার নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের ২০ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া গত ৩১ জানুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় আবদুল হামিদকে দ্বিতীয় দফা রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়।