নূর মোহাম্মদ, কিশোরগঞ্জ: একেই বলে বীরের মৃত্যু নেই। কফিনে ফিরছেন একজন ফায়ার ফাইটার। এ খবরে সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষের অপেক্ষা। অবশেষে সাঁজবেলায় শেকড়ে থামলো গৌরবের পতাকা বহনকারী সোহেল রানার কফিন বহনকারী এম্বুলেন্স। এ যেনো এক ভিন্ন গৌরবের মৃত্যু! যে মরনে চোখে জল এলেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে সবাইকে।
কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে চির-নিদ্রায় শায়িত হলেন, ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকন্ডের সময় আগুন নিভাতে গিয়ে আহত হয়ে চিকিৎসধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ফায়ারম্যান সোহেল রানা। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসীর চোখের জলে তাকে জানানো হলো শেষ বিদায়। মঙ্গলবার বাদ আসর চৌগাঙ্গা পুরানবাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বিকেলে সোহেল রানার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়।
সবশেষ গত ২৩ মার্চ গ্রামের বাগিতে মায়ের সাথে শেষ দেখা হয়েছিল সোহেল রানার। সেদিন বাড়ি থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় মাকে বলেছিলেন, ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে শীঘ্র বাড়ি ফিরবেন তিনি। বাড়ি ফিরেছেন সোহেল রানা। তবে ছুটি মিলেছে জীবন থেকেই!
শীঘ্র ছুটি নিয়ে ফিরে আসছি বলে কিছুদিন আগেই বাড়ি ছেড়েছিলেন সোহেল রানা। তবে তিনি এলেন, নিথর দেহে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে সামনে-পেছনে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের গাড়ির মাঝখানে একটি এস্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে আনা হয় সোহেল রানার মৃতদেহ। এ সময় চারদিকে কান্নার রোল পড়ে। সোহেলের মা-বাবাসহ আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে আশপাশের পরিবেশ। এ সময় তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ।
গতকাল বিকেল পৌনে ৬টায় চৌগাঙ্গা পুরান বাজার জামে মসজিদের সামনের মাঠে সোহেলের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ পড়ান, সোহেলের চাচাতো ভাই মেরাজুল ইসলাম নোমান। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ছাড়াও ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, সহকারি কমিশনার সাইফুল ইসলামসহ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। নামাজে জানাজা শেষে বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয় বীর যোদ্ধা সোহেল রানাকে।
স্বাজন ও এলাকাবাসী বলছেন, পরিবারের বড় সন্তান সোহেল রানা ছিলেন সংসারের একমাত্র অবলম্বন। ফায়ার সার্ভিসের চাকুরির টাকায় চলতো পরিবারের ভরণপোষন আর ছোট তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ। তাইতো প্রিয়জনের এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা কেউ। তবে এলাকাবাসী বলছেন, দেশের জন্য এমন মৃত্যু সবার জন্য গৌরবের।
এ দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে বলে জানান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।
গত ২৩ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ার নামে একটি ভবনে অগ্নিকান্ডের সময় সেখানে আটকে পড়াদের উদ্ধার করার সময় গুরুতর আহত হন ফায়ারম্যান সোহেলে রানা। তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গত ৫ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সেখানকার সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বাংলাদেশ সময় ভোর রাতে তার মৃত্যু হয়।