নিজস্ব প্রতিবেদক : গত বুধবার সকালে তখন ১১টা ৪০ বাজে। এ প্রতিনিধিকে একজন ফোন করে জানান, সিভিলে আসা পুলিশ এক মাদক কারবারিকে ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে। তৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেল ওরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা,কর্মচারী। নগদ সাড়ে ৫হাজার টাকা আর ২টি বেনসনের বিনিময়ে তারা ওই কারবারিকে ছেড়ে দেয়। ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার।
উপজেলার আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে গতকাল (২৬ সেপ্টেম্বর) ওই ঘটনাটি ঘটে। এ সময় উপজেলার রামদী ইউনিয়নের মাদক ব্যবসায়ী শামসু মিয়াকে (৬৫) সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আটক করে। পরে তার ভাতিজা আগরপুর বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী তার দোকান থেকে ৫হাজার ৫০০টাকা দিয়ে তার চাচাকে ছাড়িয়ে নেন।
শামসু মিয়া জানান, আগরপুর বাসস্ট্যান্ডের নিরিবিলি হোটেলের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে রামদী এলাকায় যায়। সেখানে যাওয়ার সময় আটককারীরা তার কাছে ২০হাজার টাকা দাবী করে বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান। সেখান থেকে ঘুরে এসে তাকে আটককারীরা বাসস্ট্যান্ডের মাছ মহল সংলগ্ন তার ভাতিজার দোকানের নিয়ে যায়।
তার ভাতিজা মুদি ব্যবসায়ী এমাদ মিয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন, তার চাচাকে ছাড়াতে তারা প্রথমে ১০হাজার টাকা দাবী করে। পরে তাদেরকে ৫হাজার টাকা দিতে চাইলে তারা রাজি হননি। পরে আরো ৫০০টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তারা দোকান থেকে বিনামূল্যে ২টি বিনসন সিগারেটও নেন। দোকানের সামনের খোলা জায়গায় গিয়ে তাদের একজন টাকাগুলো গুনেন। পরে তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোতে তুলে তার চাচাকে বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ দিকে চলে যান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা।
খবর পেয়ে এ প্রতিনিধি মাইক্রোটির (ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৫০৯৬) কাছাকাছি যেতেই তাদেরকে বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ দিকে প্রস্তান করতে দেখা যায়। মাইক্রোটি দক্ষিণে শ্রী দূর্গা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে গিয়ে থামে। এ সময় পিছু নেন এ প্রতিনিধি। সেখানে মাদক কারবারি শামসু মিয়াকে নামিয়ে একজন কর্মকর্তা তাকে বলেন, কান ধরেন আর বলেন ‘জীবনে আর কোনো দিন মাদক ব্যবসা করব না’। এ কথা বলে তাকে ছেড়ে দেন।
এ সময় এ প্রতিনিধি নিজের পরিচয় দিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা প্রস্তান করতে চায়। তখন তাদের কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার চাওয়া হলে এ প্রতিনিধির নাম্বার নিয়ে চলে যায়। ১১টা ৪৭মিনিটে ০১৮২০৯৯৭২১৪ থেকে ফোন করে তাদের নাম্বার নিশ্চিত করেন।
পরে গতকাল বিকেলে ওই ফোনে যোগাযোগ করা হলে নিজেকে সিপাহী শরিফুল ইসলাম পরিচয় দিয়ে বলেন অভিযানের নের্তৃত্বে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক সেন্টু রঞ্জন নাথ ছিলেন। তার মোবাইল নাম্বার চাওয়া হলে তিনি পরে দেবেন বলে ফোন রেখে দেন। পরে বার বার ওই নাম্বারে ফোন করা হলে কখনো কেটে দেন, কখনও রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিব তৌহিদ ইমাম জানান, আমাদের সদস্যরা এ ধরনের করার কথা না। তারপরও আপনি যেহেতু বলছেন খোঁজ নেওয়া হবে।
এর কিছুক্ষণ পর রাত ৭টায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভৈরব সার্কেলের উপ-পরিদর্শক এ প্রতিনিধির নাম্বারে ফোন করেন। এ সময় তিনি বলেন, এলাকায় অভিযানে গেলে স্থানীয় লোকজন জানায় লোকটি (শামসু মিয়া) মাদক সেবন করে। আটকের পর তার কাছ থেকে কিছু তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করি। কোন তথ্য না পাওয়ায় তাকে কানধরে উঠবস করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে উৎকোচ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, মাদক কারবারিদের আটক করার কারণে কোন চক্র এ ধরনের মিথ্যা কথা বলতে পারে।