হাওর বাংলা ডেস্ক : উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং টানা চারদিনের বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের মনু নদ ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে উপজেলা সংযোগ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজার। বিভাগীয় শহর সিলেটের সঙ্গেও রয়েছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ৩ লাখের ওপর মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
শনিবার রাতে মনু নদের বড়হাট এলাকার ভাঙন দিয়ে পৌর শহরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ভাঙন এলাকা থেকে শহরের কুসুমবাগ পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকা পানির নিচে রয়েছে। শহরের চারটি ওয়ার্ড ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় ৪ থেকে ৫ ফুট উপর পর্যন্ত পানি রয়েছে। নাজুক অবস্থায় পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এই পাঁচটি স্থানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানিয়েছেন, শহরে পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন। উপজেলাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে রাজনগরের কদমহাটায় সড়কে পানি ওঠায় জেলার সঙ্গে রাজনগর, জুড়ি, কুলাউড়া, বড়লেখা উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে সংযোগ সড়কের কয়েকটি স্থানে পানি ওঠায় যোগাযোগ বিচ্ছিন রয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার পৌর এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় সিলেটের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ধলাই নদীর পানি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে এবং মনু নদের পানি আজ রোববার বিপদসীমার ১৪৯ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে।
অপরদিকে নদীর পানি কমলেও লোকালয়ে পানি বাড়ছে। জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঘরবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল কলেজ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এখনও পানি রয়েছে। সব মিলিয়ে মৌলভীবাজারের প্রায় দেড়শ গ্রাম বন্যা কবলিত।
সরেজমিনে কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, শুধুমাত্র এ ইউনিয়নের ৪২ গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে।
জেলাব্যাপী গত ৪ দিনে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন আরো ৩ জন। পানির স্রোতে পড়ে এদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। জেলাব্যাপী সেনাবাহিনী বন্যার্তদের সহযোগিতায় কাজ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী পার্থ জানিয়েছেন, ধলাই নদী ও মনু নদের পানি দ্রুত কমছে। নদ-নদীর পানি কমলে লোকালয় থেকেও পানি নেমে যাবে।