টিটু দাস, কিশোরগঞ্জের হাওরের ইটনা উপজেলা থেকে ফিরে : চায়না আক্তার। বয়স বড়জোর সাত বছর। জীবনের মানে কতোটুকুইবা বুঝতে শিখেছে সে? কিন্তু বুঝুক আর না বুঝুক, শিশু বয়সেই তাকে নামতে হয়েছে জীবন ও জীবিকার কঠিন যুদ্ধে। ঘন কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো শীতের ভেতর পাতলা কাপড়ের ছেঁড়া জামা গায়ে, খালি পায়ে শিশিরভেজা পথ মাড়িয়ে সাত সকালেই তাকে ছুটতে দেখা গেছে হাওরের মাঠে।
চোখ তার গারুর পালে সাঁটা। ওই গরুরই গোবর তুলে বাড়ি নিয়ে যাবে চায়না। সেই গোবর খড়ে মিশিয়ে ছটা তৈরি করবেন চায়নার মা সুখিয়া। প্রতি ছটা বিক্রি হবে ৫ টাকা দরে। সেই টাকায় ঘুরবে চায়নাদের সংসাদের চাকা।
ঘুম থেকে জেগেই তাই খেয়ে না খেয়ে গোবরের খোঁজে ছোটে চায়না। সঙ্গে তার দুই বছরের বড় ভাই আকরাম ও বোন তাসলিমা। চায়নার সঙ্গে তারাও ছুটে চলে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে । সকাল থেকে দুপুর এভাবেই কেটে যায় ওদের।চরানোর জন্য হাওরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গরুর পাল।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় চিলনী হাওরের বিশাল মাঠ যেনো শুরু গরুর পালের নয়, চায়নাদেরও খাদ্যের উৎস। ঘাস খেতে খেতে মাঠময় চরে বেড়ায় গরু। আর চরতে থাকা গরুর পেছন পেছন ছুটে চলে চায়না, তাসলিমা, আকরাম। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাটির কাজ শেষে বাড়ি ফিরে ছেলে-মেয়েদের আনা গোবরে ছটা তৈরিতে বসেন মা।
বড় বোন আকলিমার বিয়ে হয়েছে। লিলুপা ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে। বড় ভাই ইমরানও কাজ করে ঢাকায়। চায়না, তাসলিমা আর আকরাম ছুটে চলে গোবরের খোঁজে।গরু চরছে হাওরের মাঠে। আলাপকালে চায়না বলে, আমি আর আকরাম ভাই-তাসলিমা আপা সকালে ভাত খাইয়া গোপর (গোবর) তুকাইতে (কুড়াতে) মাডে (মাঠে) আইয়ি। আবার দুহুর (দুপুরে) বাড়িতে যাইগা। চায়নার বড় ভাই আকরাম বলে, আমরা গোহর তুকাইয়া বাড়িতে নিইয়া গেলে আম্মা ছটা বানাইয়া কয়টা ট্যাহা পায়।