নিজস্ব সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে সরকারি রাস্তা দখল করে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় জনসম্মুখে সিরাজুল ইসলাম নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার দাড়ি কেটে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর পরদিন ওই মুক্তিযোদ্ধার আপন ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক এমরানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
গতকাল সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের সামনে উপজেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, পৌর মেয়র ও জনসাধারণের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) এমরান মিয়া বাদী হয়ে কুলিয়ারচর থানায় ৩ জনের নাম উল্লেখ ও ৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন, কুলিয়ারচর পৌর এলাকার বড়খারচর গ্রামের মৃত জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে মোঃ মতিন মিয়া (৪২) ও একই গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে শামীমুল ইসলাম শামীম (৩২) ও শাওন ইসলাম (২৮)। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ অভিযুক্ত আসামি শামীমুল ইসলাম শামীম (৩২) ও শাওন ইসলামকে (২৮) গ্রেপ্তার করেন। তারা দুজনই কুলিয়ারচর পৌর এলাকার বড়খারচর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে।
জানা যায়, এর আগে গত শনিবার (৮ এপ্রিল) বিকালে উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক জিএস এমরান মিয়া বড়খারচর মোড়ে সরকারি রাস্তা দখল করে মতিন মিয়ার ভবন নির্মাণ কাজে বাঁধা দিলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জের ধরে পরদিন সন্ধ্যায় এমরান মিয়ার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামকে বড়খারচর মোড়ে একটি চায়ের দোকানে একা পেয়ে অকৃত্য ভাষায় গালিগালাজ করে মতিন মিয়ার মামাত ভাই শামীমুল ইসলাম শামীম। একপর্যায়ে শামীম উপস্থিত মানুষের সামনেই বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের দাড়ি কেটে ফেলার হুমকি দেন। এ সময় উপস্থিত জনতা শামীমের এমন ন্যাক্কারজনক কথার জোড়ালো প্রতিবাদ করেন। পরে শামীম ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
চাচার সাথে এর কম ন্যাকারজনক আচারনের খবর জনতে পারলে ওই দিন আবারও মতিন মিয়া, শামীম ও শাওনের সাথে এমরান মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গতকাল সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে স্থানীয় এমপি নাজমুল হাসান পাপন হতদরিদ্রের মধ্যে সেলাই মেসিন বিতরণ করতে কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদে আসেন। বিররণ কার্য শেষ করার পর এমপি পাপনের সাথে সাক্ষাৎ করতে উপজেলা চত্বরে যান এমরান মিয়া।
এরপর এমপি গাড়িতে উঠে উপজেলা পরিষদ ত্যাগ করেন। এর পরপর এমরান মিয়াও উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের মোটরসাইকেলে উঠে কিন্তু মতিন, শামীম, শাওন তেড়ে এসে এমরান মিয়াকে মারধর ও গালাগাল করেন। উক্ত ঘটনা উপজেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য এবং পৌর মেয়রের সামনেই ঘটে ।
এ ঘটনার পর এমরান মিয়ার কুলিয়ারচর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে শামীম ও শাওনকে গ্রেপ্তার করে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা উপজেলা পরিষদের ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসামি শামীম ও শাওনকে গ্রেপ্তারের পর বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, মতিন মিয়া সরকারি জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করছিল, আমরা সচেতন নাগরিক হিসেবে সেটার প্রতিবাদ জানাই। এর প্রেক্ষিতে জনসম্মুখে আমাকে যেভাবে দাড়ি কেটে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে এতে আমি বিস্মিত। আমি একজন মুসলিম হিসেবে নবীর সুন্নতের উপর এমন কথার পর আমি সত্যি বাকরুদ্ধ। আমি এর কঠিন বিচার চাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, এ ঘটনার পর কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি, কিন্তু এখনও মামলা রুজু হয়নি।