হাওর বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশি এক তরুণীকে ভারতে নির্যাতনের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর বাসা ঢাকার হাতিরঝিলে। আর নির্যাতনকারীদের একজনের বাসা মগবাজার এলাকায়। নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কেরালায়। ওই তরুণী ও অভিযুক্তরা সবাই এখনও ভারতে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০-২২ বছরের ওই মেয়েটিকে ৩/৪ যুবক নির্যাতন করে। সেখানে একটি মেয়েও দেখা যায়। উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ জানান, সাইবার পেট্রোলিংয়ের অংশ হিসেবে ভিডিওটি পুলিশের নজরে আসে।
তিনি বলেন, যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে মগবাজার এলাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির মিল পাওয়া যায়। ওই আইডি ধরে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার মাকে ভিডিওটি দেখালে প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন, ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় রয়েছেন। মগবাজার এলাকার অনেকেই তাকে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ বলে শনাক্ত করেন। হৃদয়ের বয়স ২৬ বছর।
হৃদয়ের মা ও মামার বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, কৌশলে হৃদয়ের মামার হোয়াইটস অ্যাপ নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করা হলে হৃদয় জানান, তিন মাস আগে তিনি ভারতে গেছেন। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটেছে ১৫-১৬ দিন আগের। ভিকটিম বাংলাদেশি। বাসা ঢাকায়, গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। মেয়েটির বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাইলে হৃদয় হোয়াটস অ্যাপে তার ভারতীয় পরিচয়পত্র পাঠান (আধার কার্ড)।
উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ জানান, হৃদয়ের দেওয়া তথ্যমতে তারা মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পেয়েছেন। মেয়েটির বাবা তার মেয়েকে চিনতে পেরেছেন। হৃদয়ের সঙ্গে নির্যাতনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের পরিচয়ও শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র, যারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অসহায়/বিদেশগমনে ইচ্ছুক নারীদের প্রলুদ্ধ করে পাচার করে। ভারতীয় পুলিশ ও ইন্টারপোলের সহযোগিতায় এই নৃশংস ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িত হৃদয় বাবুর বাবা-মা ও মামাকে হাতিরঝিল থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মানবপাচারের মামলার প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অভিযুক্ত ও নির্যাতনের শিকার তরুণীকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মেয়েটির বাবা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ৫ যুবক বেপরোয়া ভাবে মারধর করছে তরুণীকে। যথেচ্ছ চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে তাঁকে নগ্ন করে দেওয়া হচ্ছে। ভিডিও’র ৫ যুবককে চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের সন্ধান চেয়েছে ভারতের আসাম পুলিশ। জানিয়েছে, এ ব্যাপারে যাঁরা তথ্য দিতে পারবেন তাদের ভাল মত পুরস্কৃত করা হবে। টুইটারে ভিডিও’র ৫ যুবকের ছবি শেয়ার করে আসাম পুলিশ লিখেছে, ‘একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় এই পাঁচ জনকে এক তরুণীর উপর অত্যাচার করতে দেখা গিয়েছে। কবে কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে যাঁরা এদের খোঁজ দিতে পারবেন, বা এই ঘটনাটি সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারবেন, তাদের ভাল মতো পুরষ্কৃত করা হবে’।
ভিডিওটি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশ কমিশনার রবিন হিবুও। জাতীয় স্তরের কিছু সংবাদ সংস্থাকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমরাও ওই ৫ যুবককে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। পুলিশ ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে।’’
ঘটনাটি নিয়ে টুইট করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও। তিনি অবশ্য ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে ৪ যুবক এবং ১ জন মহিলার নাম করেছেন। লিখেছেন, ‘উত্তর-পূর্বের এক তরুণীকে নৃশংস অত্যাচার করা হয়েছে। ধর্ষণ করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ৪ যুবক এবং ১ জন মহিলা। শয়তানদের ধরতে সবরকম চেষ্টা চলছে’।