হাওর বাংলা ডেস্ক : চীনে বাদুড় থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা। সোমবার এ বিষয়ে দুটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে নেচার সাময়িকীতে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, সার্স ভাইরাসের মতো করোনাও বাদুড় থেকে ছড়িয়েছে।
প্রথম গবেষণাটি করেছেন, চীনের ফুদান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ইয়ং জেন জং ও তাঁর এক সহকর্মী। তাঁরা গবেষণার জন্য এক রোগীর ফুসফুস থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। ওই রোগী গত ২৬ ডিসেম্বর জ্বর-কাশির লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই রোগী সাউথ চায়না সিফুড হোলসেল মার্কেটে কর্মরত ছিলেন।
ওই ব্যক্তির থেকে নেওয়া নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সার্স (সেভার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসের সঙ্গে করোনাভাইরাসের মিল রয়েছে। এই করোনার জিনোমে সিকুয়েন্সের সঙ্গে সার্সের জিনোম সিকুয়েন্সের ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ মিলে গেছে। এর আগে চীনে ২০০৩ সালে সার্স ছড়িয়ে পড়েছিল। যা ছড়িয়েছিল বাদুড় থেকে।
নেচারে প্রকাশিত অপর গবেষণাও বলা হয়, তারা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন এই ভাইরাসটি বাদুড় থেকেই ছড়িয়েছে। এটি সার্স ভাইরাসের অনুরূপ ভাইরাস।
গত ডিসেম্বরে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষক জেং লি শি ও তাঁর এক সহকর্মী এই ভাইরাসটি সম্পর্কে প্রথম প্রতিবেদন দেন। তারা মোট সাত ব্যক্তির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা চালিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছয় ব্যক্তিই ওই সিফুড মার্কেটে (সাউথ চায়না সিফুড হোলসেল মার্কেট) কাজ করতেন। এরা সবাই মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।
জিং লিয়েদের গবেষণা ওঠে এসেছে, তাঁরা যেসব ব্যক্তিদের নমুনা নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁদের প্রত্যেকের ভাইরাসের সঙ্গে প্রত্যেকের ভাইরাস ৯৯ দশমিক নয় ভাগ মিলে গেছে। এ ছাড়া নতুন প্রাপ্ত এই ভাইরাসের সঙ্গে সার্সের ৭৯ দশমিক ৫ শতাংশ মিল রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান অঞ্চলে প্রথম এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরপর সেখানে এটি মহামারী আকার ধারণ করে। এখন পর্যন্ত চীনে ৩৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে। এর মধ্যে শুধু রোববারই (২ ফেব্রুয়ারি) মারা গেছেন ৫৭ জন। চীনের অনুসন্ধানী দল নিশ্চিত হতে পেরেছে, এই ভাইরাসটি উহানের ওই সিফুড মার্কেট থেকেই ছড়িয়েছে। ‘সাউথ চায়না সিফুড হোলসেল মার্কেট’ নামের ওই বাজারটিতে সাপ, বাদুড়, খাটাশের মতো জীবন্ত সব বন্য প্রাণীও বিক্রি হয়ে থাকে।
করোনা ভাইরাসটি এখন আর চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ভারতসহ বিশ্বের অন্তত ২৫ টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে উহান থেকে ফিলিপাইনে যাওয়া এ ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বিশ্বের জন্য জরুরি অবস্থা বলে সতর্কতা জারি করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।