নিজস্ব সংবাদদাতা: এক সময় কিশোরগঞ্জ আদালতে আইনপেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দিয়েছিলেন আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বও।
সেই আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে আইনজীবী জীবনের স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, অতীতে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আইনজীবীদের যে গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি ও ঐতিহ্য ছিল তা আজ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। আগে যারা সংসদে এমপি হতেন তাদের একটা বড় অংশই ছিল আইনজীবী। তাঁরা সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতৃত্ব দিতেন। তবে বর্তমানে সময়ে নানা অবক্ষয়ের কারণে সেটা আর দেখা যায় না। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রায়শই নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে মানুষ আইনজীবীদের আগের মতো শ্রদ্ধার চোখে দেখে না। সমাজে তাদের প্রভাব দিন দিন কমছে। কিন্তু এটি ভালো লক্ষণ না।
এ হতাশাজনক অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে জেলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপধান পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ১৯৭০ সালের পার্লামেন্টে আইনজীবীর সংখ্যা ছিল শতকরা ৫১ ভাগ। তা কমে অষ্টম সংসদে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৩৩ জন। তার মধ্যে অনেক নিষ্ক্রীয় আইনজীবীও ছিলেন। এখন হয়ত তা আরো কমে গেছে। এসব তথ্য থেকে এটাই প্রমাণিত হয় আইনজীবীরা তাদের অতীত গৌরব হারিয়েছেন।
রাষ্ট্রপ্রধান আইনজীবীদের সমালোচনা করে বলেন, কিশোরগঞ্জ আদালতে আইনি সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ওকালতনামা বাবদ ২৭০ টাকা করে নেওয়া হয়। এটি খুবই বেশি। সামিতির স্বার্থে এত বেশি টাকা নেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। কেবল টাকার পেছনে ছোটার যে কালচার তৈরি হয়েছে, তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবেই মানুষ আইনজীবীদের আগের মতো শ্রদ্ধা করবে।
রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের নদ-নদী-পকুর ভরাট হয়ে যাওয়া ও উঠতি বয়সী কিশোরগঞ্জ গ্যাংগের নৈরাজ্যে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, নরসুন্দা নদীতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। পুকুরগুলো যে ভরাট হয়ে না যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। শহরের পরিবেশ সুন্দর রাখতে হবে। আর যে গ্যাং কালচার শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাসহ সামাজিক প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নদ-নদী ও পুকুর দখল বা ভরাটের মতো বিষয়সহ জনবিরোধী বিষয়গুলো নিয়ে আইনি লড়াইও করা যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলো সেই সচেতনতাবোধ আমরা কিন্তু আইনজীবীদের মাঝে দেখি না। এ ধরণের আইনি সেবা দিয়েও মানুষের আস্থাভাজন হওয়া যায়।
জেলা আইনজীবী সমিতির প্রাঙ্গণে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়া মোহাম্মদ ফেরদৌসের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ, জেলা ও দায়রা জজ ছায়েদুর রহমান খান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সহিদ। এ সময় কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতির নামে আইনজীবী সমিতির ১০ তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই সমিতির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান, মানপত্র পাঠ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
এরপর বিকেল পাঁচটায় রাষ্ট্রপতি শহরের শ্যামসুন্দর আখড়া পরিদর্শন করেন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
বুধবার রাতে সার্কিট হাউজে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আজ বৃহস্পতিবার রাতেও সার্কিট হাউজে একই ধরণের মতবিনিময় সভার আয়োজন রয়েছেন।
আগামীকাল শুক্রবার বেলা ১২ টায় হেলিকপ্টারযোগে রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজ উপজেলা মিঠামইন যাবেন। সেখানে বেশকিছু অনুষ্ঠানে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। মিঠামইনে রাত যাপন শেষে শনিবার সেখানে আরো কিছু কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিকেলে ইটনা যাবেন তিনি। রবিবার ইটনায় সুধী সামাবেশে যোগ দেওয়াসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করবেন তিনি।
সোমবার সেখানে উন্নয়নমূলক কাজ দেখে বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে আরেক হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে যাবেন। এবং বিকেলে স্থানীয় খেলার মাঠে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। মঙ্গলবার অষ্টগ্রামের উন্নয়ন কাজকর্ম দেখে বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে অষ্টগ্রাম ত্যাগ করবেন।