জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে বাংলাদেশে দিন দিন বজ্রপাত বেড়ে চলেছে | বজ্রপাতের থাবায় প্রাণ হারাচ্ছে প্রতি নিয়ত অসংখ্য মানুষ |
বিশেষ করে দেশের হাওরাঞ্চলে বজ্রপাতের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে | বিবিসি,বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যম ও বিভিন্ন সংস্থার জরিপ গুলোর প্রতিবেদনে হাওরাঞ্চলে ব্রজপাত বিষয়ে এমন তথ্যই উঠে এসেছে |
বাংলাদেশের উত্তর -পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কিশোরগঞ্জ ,সুনামগন্জ, নেত্রকোনা,বি-বাড়ীয়া,হবিগন্জ, ও মৌলভীবাজার জেলার ৫৫টি উপজেলা নিয়ে বিশাল হাওরাঞ্চল|এ অঞ্চলে প্রায় আড়াই কোটি লোকের বসবাস | যাদের পেশা কৃষিকাজ ও বর্ষায় মৎস আহরন |
বিগত এক দশক ধরে হাওরে বজ্রপাত এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, প্রতিনিয়ত অসংখ্য হাওরবসীকে বজ্রপাতের স্বীকার হয়ে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে | বর্তমানে বজ্রাতণ্কে কৃষকেরা মাঠে কাজ করতে ভয় পাচ্ছে | প্রতি বছর হাওরে ধান কাটার জন্য যে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়, ব্রজপাত বেড়ে যাওযা এর অন্যতম কারন | ফি-বছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা হাওরে বোরো ধান কাটতে এসে,বজ্রপাতে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় |ফলে হাওরে উল্লেখযোগ্য হারে বাইরে থেকে দাওয়াল(ধান কাটার শ্রমিক) আসা কমে গেছে |
একটা সময় ছিলো,শুধু চৈত্র – বৈশাখ মাসেই হাওরে কাল বৈশাখী ঝড় ও ব্রজপাত হতো |তখন ব্রজপাতে এত মৃত্যু হতো না বলে এলাকাবাসী মনে করে |আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে এখন আষাঢ় – শ্রাবন মাসেও ঝড় হচ্ছে, ব্রজবৃষ্টি হচ্ছে | বর্ষাকালে হাওরের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় মৎস আহরন|এ সময় তারা ছোট ছোট কোসা (ডিঙ্গী) নৌকা নিয়ে মাছ শিকারে মেতে উঠে| কিন্তু মাছ শিকার করতে গিয়ে প্রায়ঃশই এসব মৎসজীবিরা ব্রজপাতের শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে | অনেকের আবার বজ্রঘাতে পানিতে তলিয়ে গিয়ে দু-এক দিন পর বহুদূরে হাওরের বিশাল জলরাশিতে লাশ হয়ে ভেসে উঠে| ফলে বর্ষার এমন দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়,মৎসজীবিরা মাছ শিকারে,হাওরে যেতে প্রতিনিয়ত আতংকে থাকে|
যে কৃষক তার সোনালী ধান কাটতে হাসিমুখে ঘর থেকে বেড় হয়,সে কৃষকই কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে বজ্রপাতে লাশ হয়ে ঘরে ফিরে | বজ্রপাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না এখানকার কৃষকের গৃহপালিত পশু গরু,ছাগল,ভেড়া পর্যন্ত | ফলে বজ্রপাত হাওরের শ্রমজীবি মানুষের জীবন ও জীবিকায়নের উপর ইতি মধ্যেই বিরূপ প্রভাব ফেলেছে |
এ অবস্থায় হাওরের এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে বজ্রপাত জনিত মৃত্যু ও আতংক হতে মুক্ত করতে হলে বিজ্ঞান সম্মত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী |
ইতিমধ্যে সরকার দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়া হাওরের কৃষকরা যাতে মাঠ কাজ করার সময় নিরাপদ আশ্রয় গ্রহন করতে পারে সে জন্য “মুজিব কেল্লা”স্হাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন | তবে এ ক্ষেত্রে কেল্লা গুলো হাওরের এমন স্হানে নির্মান করা দরকার যাতে বর্ষাকালীন সময়ে মৎস আহরনকারীরা ও হাওরে যাতায়াতকারী যাত্রীবাহি ট্রলার ও লঞ্চের যাত্রীরাও এতে আশ্রয় নিতে পারে |অনেক অবিজ্ঞ মহল মনে করেন হাওরে মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন বৃদ্ধি বজ্রপাতের একটি কারন|ফলে শিগগির হাওরাঞ্চলে নির্ধারিত দূরত্ব পর পর বজ্র নিরোধক টাওয়ার স্হাপনের পরিকল্পনা নেয়া দরকার |এছাড়া হাওরাঞ্চলের উপযোগী বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে হাওরকে সবুজায়ন করা অতিব প্রয়োজন |
এসব পদক্ষেপ গ্রহন ও কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারলে হাওরবাসী বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে বলে তাদের প্রতìাশা |তানাহলে বজ্রপাত জনিত এ ভয়াল প্রাকৃতিক সমস্যা হাওর জনপদের উপর দীর্ঘ মেয়াদি বিরূপ প্রভাব ফেলবে ||
লেখকঃ মোঃ জসিম উদ্দিন
প্রভাষকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ,
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কলেজ ,ইটনা,কিশোগন্জ |