সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / শোলাকিয়ায় তিন লক্ষাধিক মুসল্লির নামাজ আদায়

শোলাকিয়ায় তিন লক্ষাধিক মুসল্লির নামাজ আদায়

নিজস্ব সংবাদদাতা : তিন লক্ষাধিক মুসল্লির উপস্থিতি ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ার ঈদ জামাত। নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। এটি ছিল এই ঈদ ময়দানে ঈদুল ফিতরের ১৯৬তম জামাত।

শনিবার (২২ এপ্রিল) সকাল ১০টায় জামাত শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।

আজ (শনিবার) ভোরের আলো ফোটার আগেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। চার স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। মাঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে মুসুল্লিদের খানিকটা দেরি হয়। তারপরও সকাল ৯টার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে জামাতে ছাতা, লাঠিসোটা, দিয়াশলাই কিংবা লাইটার নিয়ে মাঠে প্রবেশে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা ছিল। এসব রেখে মুসুল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশ করতে হয়েছে।

ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরের এ ঈদগাহ মাঠে। ঈদগাহ মুখী সব রাস্তাঘাট মুসল্লিদের দখলে চলে যাওয়ায় কয়েক ঘণ্টার জন্য শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জামাত শুরুর ঘণ্টাখানিক আগেই সাত একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববতী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও আশপাশের বাসাবাড়ির ছাদে উঠে জামাতে শরিক হতে দেখা যায় অনেককে।

অন্যদিকে নারীদের জন্য শহরের সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৃথক ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। সেখানেও বহু নারী ঈদ জামাতে অংশ নেন।

নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ।

২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি সর্তকর্তার অংশ হিসেবে শোলাকিয়ায় নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয় পুরো আয়োজন। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, ১৩ শতাধিক পুলিশ, শতাধিক র্যাব সদস্য, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোষাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নজরদারিতে ছিল পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। এছাড়া মাঠ ও শহরসহ প্রবেশ পথগুলো সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাঠে স্থাপিত ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে দূরবীন নিয়ে নিরপত্তার দায়িত্ব পালন করে র্যাবও পুলিশ সদস্যরা।
শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। তাছাড়া অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে ১০জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করেন। ঈদগাহ এলাকায় তিনটি অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল টিম এবং অগ্নি নির্বাপক দলও মোতায়েন ছিল। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিল বিপুল সংখ্যক স্কাউট সদস্য।
প্রত্যেক মুসল্লিকে মেটালডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করে তারপর মাঠে প্রবেশ করার সুযোগ দেওয়া হয়।

শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র মাহমদু পারভেজসহ জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলে মুসুল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি এবং নামাজ আদায় সম্পন্ন হয়েছে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার পাঁচ লাখের বেশি মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন বলে আমাদের ধারণা । এবারের জামাতের ব্যবস্থাপনা ছিল খুবই ভাল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে মুসল্লিদের।

এবার প্রচন্ড গরমের কথা চিন্তা করে মুসল্লিদের মাঝে বোতলজাত পানি সরবরাহ করে ইলহাম অটো রাইস মিল লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আর এসব বোতলজাত পানি ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ করেন কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ। যা ব্যাপক প্রশংসিত হয় জামাতে।

ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। নামাজ শেষে জামাতে আসা যাত্রীদের নিয়ে আবার গন্তব্যে ফিরে যায় ট্রেন দুটি। দেশের বৃহত্তম এ ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে মাঠ পার্শ্ববর্তী এলাকায় হস্ত, কারু ও নানারকম শিল্পের মেলা মুসুল্লিদের জন্য ছিল অন্যতম আকর্ষণের বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *