সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / কটিয়াদীতে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর উঠান বৈঠকে পুলিশের হানা, জব্দ অস্ত্র ও গাড়ি

কটিয়াদীতে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর উঠান বৈঠকে পুলিশের হানা, জব্দ অস্ত্র ও গাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভার আগামী মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বেশ কিছুদিন হলো মাঠে সক্রিয় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সালমা আনিকা। এই সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি উঠান বৈঠকে হানা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় সালমা আনিকার গাড়ি থেকে একটি রাইফেল, ১৮ রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার হয়েছে। আজ সোমবার অস্ত্র ও গাড়িটি জব্দ দেখায় পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনও করা হয়। এ ঘটনা স্থানীয় রাজনীতির মাঠে এখন প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে।

আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কটিয়াদী পৌরসভার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। সেই হিসেবে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পৌরসভায় ভোট করতে হবে। যদিও কটিয়াদী পৌরসভার তফসিল এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে সালমা আনিকা মাঠে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, সালমা আনিকার স্বামী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক তরিকুল মোশতাক। আর শ্বশুর মোশতাকুর রহমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সালমা আনিকার স্বামী তারিকুল দলের কাছে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সালমার শ্বশুর মোশতাকুর চেয়ারম্যান পদে দলের কাছে দলীয় মনোনয়ন চান। কিন্তু তিনিও পাননি। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাননি মোশতাক। শেষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পান। আসছে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এখন মাঠে সরব রয়েছেন সালমা আনিকা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকেই কিশোরগঞ্জ-২ আসনের (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) সাংসদ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদের সঙ্গে পরিবারটির দূরত্ব তৈরি হয়। এরপর থেকে পরিবারটি আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়ে। এরই মধ্যে মারপিট ও ভাঙচুরের অভিযোগে এক বছরের ব্যবধানে তারিকুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। সর্বশেষ মামলাটি করেন দেলোয়ার হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। দেলোয়ার আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে পরিচিত।

গত শনিবার সন্ধ্যায় সালমা আনিকা গণসংযোগ করতে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কামারকোনা মহল্লায় যান। এটি তাঁর পূর্বঘোষিত নির্বাচনী গণঃসংযোগের দিন ছিল। সঙ্গে ছিলেন স্বামী তারিকুল। তাঁরা একটি পাজেরো জিপ গাড়িতে করে কামারকোনা মহল্লায় যান। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা একটি উঠান বৈঠক করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় খবর আসে, মারপিটের মামলার আসামি হিসেবে তারিকুলকে ধরতে পুলিশ কামারকোনা আসছেন। তথ্যটি পাওয়ার পর তারিকুল দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পুলিশ এসে গাড়িটি তল্লাশি করেন। তখন গাড়ির ভেতর থেকে একটি একে ২২ রাইফেল, ১৮ রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেন।

এ সময় পুলিশ সালমা আনিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়, অস্ত্রটি তারিকুলের এবং সেটির লাইসেন্স রয়েছে। গাড়িটি সালমা আনিকার নামে রেজিস্ট্রেশন করা। রাতে পৌনে নয়টার দিকে সালমা আনিকাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শেষে আজ কাগজে–কলমে গাড়ি ও অস্ত্র জব্দ দেখানো হয়। অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল চেয়ে আবেদনটিও আজ করা হয়।

তারিকুল মোশতাক বলেন, ‘আমরা আওয়ামী পরিবার। অথচ দলের সব ক্ষমতা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে। তা না হলে আমার লাইসেন্স করা অস্ত্র এবং গাড়ি জব্দ করা হতো না।’ সালমা আনিকা বলেন, ‘আমার শ্বশুরও স্রোতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছেন। সুতরাং কোনো বাধায় আমি ভীত হব না এবং লক্ষ্য থেকেও সরে আসব না।’

জানতে চাইলে কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল জানান, তারিকুল মোশতাক দুই মামলার আসামি। চেষ্টা করেও তাঁকে ধরা যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় শনিবার বিকেলে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারায় অভিযান চালানো হয়।

অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল আবেদনের কারণ সম্পর্কে ওসির দাবি, তারিকুল কারণে-অকারণে লোকজনকে অস্ত্রের ভয় দেখান। সামনে পৌরসভা নির্বাচন। তাঁর স্ত্রী প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ অবস্থায় তাঁর হাতে অস্ত্র নিরাপদ নয়। আর গাড়ি জব্দের কারণ হিসেবে বলেন, গাড়ির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে কি না, তা যাচাই করার জন্যই জব্দ দেখানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *