সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / কিশোরগঞ্জে প্রাচীন পুকুর ভরাট চলছে অভিনব কৌশলে

কিশোরগঞ্জে প্রাচীন পুকুর ভরাট চলছে অভিনব কৌশলে

নিজস্ব সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জে প্রভাবশালী চক্রের সহায়তায় ফের অবৈধভাবে ভরাট করা হচ্ছে দেড়শ’ বছরের পুরোনো একটি পুকুর। জেলা শহরের শোলাকিয়া-খড়মপট্টি এলাকার সার্জেন্ট জলিল গলির শেষ মাথায় অবস্থিত এই পুকুরটি অভিনব কৌশলে কিছুদিন ধরে ভরাট চলছে। ঠেলাগাড়ি দিয়ে রাতে সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসের পেছনে নির্মাণাধীন বাড়ির এই পুকুর সংলগ্ন ভূমিতে মাটি এনে জমা করে কৌশলে পুকুরেই ফেলে দক্ষিণ-পূর্ব পাড় ভরাট করা হয়েছে। পাশাপাশি এই পাড়ের বিপরীত দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় ভরাট করে বাউন্ডারি দেয়াল তোলা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এ খবর পেয়ে দু’দফা পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর ভরাট না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে প্রতিদিন কয়েক ফুট করে ভরাট করছে প্রভাবশালী চক্র। সরেজমিনে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পুকুরটি ভরাট করতে মাঠে নামে ওই চক্র। তারা মাত্র এক সপ্তাহে পুকুরের ১০০ শতাংশ জমির ৮ শতাংশ ভরাট করে ফেলে। ওই সময় বুলবুল ভিলার সামনের সড়কে মাটি রেখে ২০-২৫টি ট্রাক্টর দিয়ে দিন-রাত পুকুর ভরাট করা হয়। সমকালসহ একাধিক পত্রিকায় পুকুর ভরাটের সংবাদ ছাপা হলে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভরাট বন্ধ হয়। প্রায় এক বছর সাত মাস পর প্রভাবশালীরা অর্থের বিনিময়ে ফের কৌশলে মাটি এনে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানান, দেড়শ’ বছরের পুরোনো পুকুরের পানি এলাকার মানুষ গোসলসহ দৈনন্দিন অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে। ১৫ কোটি টাকা মূল্যের জমির ওপর অবস্থিত পুকুরটি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় ২২ বছর ধরে এর কোনো সংস্কার হয়নি। বরং এর পানি নোংরা করে ব্যবহারের অনুপযোগী করে তোলার অপচেষ্টা হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষ দিকে মামলার রায় পক্ষে যাওয়ার পর বর্তমান মালিক প্রয়াত মসনদ আলীর ছেলে মশিউর রহমান স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পুকুরটি ভরাট শুরু করেন। কয়েকদিন ধরে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা পুকুর পরিদর্শন করেন। তারা কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে চলে যান। এর পর থেকেই কৌশলে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়।


এলাকাবাসীর কাছে খবর পেয়ে পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর ভরাট না করার নির্দেশ দেন। তবে সেই নির্দেশ অমান্য করে মশিউর রহমান ও তার লোকজন পুকুর ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দিনের অধিকাংশ সময় এবং সন্ধ্যার পর এলাকাটি নীরব থাকে। ওই সময় এবং সুবিধাজনক সময়ে এক-দুই ফুট করে পুকুর ভরাটের কাজটি চালায় প্রভাবশালীরা।
পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, গত বছর পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভরাট না করতে বাধা দিয়েছি। তারপর ভরাট প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। আবারও ভরাট করা হচ্ছে। পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় আবারও পুকুর ভরাট না করতে বলে এসেছি। এরপরও কাজ না হলে প্রশাসনের সহায়তায় এটি বন্ধে উদ্যোগ নেব। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, এ ঘটনা তার জানা নেই। জেলা ও ঊধ্বর্তন পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, পুকুর-জলাধার ভরাট করা আইনের লঙ্ঘন। পুকুরটি ভরাট হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্থানীয়রা নানা সমস্যায় পড়বেন। জলবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এর বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি।
কিশোরগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) সভাপতি অধ্যাপক শরীফ সাদী বলেন, শহরে পুকুর ভরাট করা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই। আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক কাজী সুমন বলেন, ব্যক্তিগত হলেও পুকুর বা জলাধার ভরাট করা বেআইনি। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করব।
পুকুরের মালিক মশিউর রহমান বলেন, পুকুর ভরাট করা হচ্ছে না। চারপাশে মাটি ফেলে সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে। তাহলে অভিনব কৌশলে পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব কোণের আট শতাংশেরও বেশি ভরাট কেন করা হলো- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি নীরব থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *