সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / বৃষ্টি উপেক্ষা করে শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লি

বৃষ্টি উপেক্ষা করে শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লি

নিজস্ব সংবাদদাতা : ভারী বৃষ্টির মধ্যেও লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। জামাতটিতে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি-শান্তি কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

বুধবার (০৫ জুন) পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সকাল ১১টা ১০ মিনিটের দিকে ঈদগাহটিতে ঈদ নামাজের মোনাজাত শেষ হয়। যদিও সকাল ১০টায় এখানে ঈদ জামাত শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু প্রবল বর্ষণের কারণে সেটা সময় মতো সম্ভব হয়নি।

গত রাত থেকেই শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। তারপর সকালে শুরু হয় প্রচণ্ড বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোর থেকেই হাজার হাজার মুসল্লির জনস্রোত নামে সড়কে। সকাল ৯টার আগেই কানায় কানায় ভরে যায় শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ।

ঈদগাহে প্রবেশ করতে মুসল্লিদের প্রত্যেকে তিন থেকে চার বার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি কাউকে। শোলাকিয়া মাঠ ও আশপাশের এলাকায় কার্যকর করা হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও দেশের কয়েকটি স্থানে হামলা এবং এর আগে ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনা মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তার বিষয়গুলো সাজানো হয়েছিলো। আমাদের লক্ষ্য ছিলো শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত।’

সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়া মুসল্লিদের ধন্যবাদ জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক মানুষকে সামলাতে একবারের জন্যও পুলিশকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়নি। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে জামাতে অংশ নিয়েছেন।’

শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে এবার পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, এক হাজার ২০০ পুলিশ, ১০০ র‌্যাব, এপিবিএন ও বিপুল সংখ্যক আনসার সদস্যের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ ছাড়া মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা ও ১২টি ওয়াচ টাওয়ার। এবার সুর্নিদিষ্ট ৩২টি গেট দিয়ে দেহ তল্লাশির পর মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় মুসল্লিদের। নজদারিতে আকশে টহল দিয়ে বেড়ায় ড্রোন ক্যামেরা। মাঠের নিরাপত্তায় প্রস্তুত রাখা হয় মাইন সুপিং ও বোমা নিস্ক্রিয়করণ দল। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হয় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে।

২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর থেকে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ঈদ জামাতের আয়োজন করছে প্রশাসন। মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত এক মাস ধরে চলে পুলিশ, র‌্যাব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা।

শহরের মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোরণ। রাস্তার দু’পাশে টাঙানো হয় বিভিন্ন রঙের পতাকা ও ব্যানার। সকালে দুটি বিশেষ ট্রেন ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে কিশোরগঞ্জে আসে।

রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় ঈদের জামাত।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেছেন, ‘এবার লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এটি শোলাকিয়ার প্রতি মানুষের ভালোবাসারই নিদর্শন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *