সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / বাংলাদেশ / জাতীয় / মহামারীকালে রাষ্ট্রপতির দিনমান

মহামারীকালে রাষ্ট্রপতির দিনমান

হাওর বাংলা ডেস্ক : দেশে করোনাভাইরাসের মহামারী মধ্যে নেই সৌজন্য সাক্ষাতের কর্মসূচি, কোনো অনুষ্ঠানও হচ্ছে না। নিয়মিত দর্শনার্থীরাও যেতে পারছেন না বঙ্গভবনে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে তাই কঠোর স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে বঙ্গভবনের চার দেয়ালে নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের মধ্যে আটকে থাকতে হচ্ছে, যিনি ফুরসত পেলেই নিজের এলাকা কিশোরগঞ্জের যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন।

তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকায় উঠে আসা আবদুল হামিদ কেমন করে তার সকাল-দুপুর পার করছেন? এলাকার মানুষের খোঁজ-খবরই বা রাখছেন কীভাবে?

কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে তার খোঁজ নিতে বঙ্গভবন সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলা হয়।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ও বঙ্গভবনের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, দাপ্তরিক কাজের বাইরে দিনের অনেকটা সময় রাষ্ট্রপতি কাটাচ্ছেন বই পড়ে। এছাড়া টিভিতে দেশ-বিদেশের খবর দেখছেন, নাতি-নাতনিদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।

নিজের জেলা কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে মো. আবদুল হামিদ, নিজেকে হাওরের মানুষ পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি।

বঙ্গভবনের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, আগে প্রতিদিন সকালে নিজের লাইব্রেরি কক্ষে পত্রিকা পড়ে সকাল শুরু হত রাষ্ট্রপতির। তবে এখন সে নিয়ম বদলেছে, খবরের কাগজ আর যাচ্ছে না রাষ্ট্রপতির হাতে।

পত্রিকা না পড়লেও রাষ্ট্রপতি টেলিভিশনে খবর দেখছেন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে গিয়ে দাপ্তরিক কাজ সারার পর প্রেস উইং থেকে দেওয়া পত্রিকার ক্লিপিং তাকে পড়ে শোনানো হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, “বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা, এনডিটিভি, স্কাই নিউজ এবং দেশীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেশ-বিদেশের খবর দেখে, বই পড়ে দিনের অনেকটা সময় কাটাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। এর বাইরে দাপ্তরিক কাজও করছেন তিনি। সেক্ষেত্রে কঠোরভাবে মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি।”

দিনের একটা সময় নাতি-নাতনিদের সঙ্গেও কাটাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

এলাকার জন্য ‘উতলা’ মন

রাষ্ট্রপতির এলাকা কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীদের বঙ্গভবনে প্রবেশ বন্ধ প্রায় তিন মাস ধরে। সর্বশেষ গত ২৬ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনী প্রধান ও আইজিপিকে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ দেন রাষ্ট্রপতি।

প্রেস সচিব বলেন, “আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যারা অসুস্থ, তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর তিনি রাখছেন। সেইসঙ্গে এলাকার মানুষ এবং এলাকার বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি খবর নিচ্ছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন অগ্রগতি কতটা হল- সেই খোঁজ নিচ্ছেন। যার সাথেই কথা বলছেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছেন।”

সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবর মাসে কিশোরগঞ্জ সফরে যান রাষ্ট্রপতি। সেই সময়ও তিনি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেন, কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

সাত দিনের ওই সফরে তাড়াইলে এক অনুষ্ঠানে নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের নানা কথা স্মরণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমার জীবন এখন আছর ও মাগরিবের মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে। আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের বেশিরভাগই এখন পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।”

বঙ্গভবনের একজন কর্মকর্তা বলেন, “দীর্ঘদিন নিজের এলাকায় যেতে না পেরে কিছুটা উতলা থাকেন রাষ্ট্রপতি। সে কারণে নিজের উদ্যোগেই এলাকার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তিনি।“

বদলেছে বঙ্গভবনের কাজের ধরন

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের ধরনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনীয় কর্মকর্তারাই নিয়মিত অফিস করছেন।

রাষ্ট্রপতির দপ্তর এবং আবাসিক এলাকা সংশ্লিষ্ট যেসব কর্মচারীকে নিয়মিত আবদুল হামিদের কাছাকাছি যেতে হয়, তাদের বঙ্গভবনেই থাকতে হচ্ছে।

টানা ৩০ দিন বঙ্গভবনে থেকে কাজ করার পর তারা নিজ নিজ বাসায় চলে যান। এরপর আরেক দল আসেন পরবর্তী ৩০ দিনের জন্য।

কাজ শুরুর আগে প্রত্যেকেরই কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। আর বঙ্গভবনের মেডিকেল টিমের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয় তাদের।

বঙ্গভবনের বাসিন্দা হলেও আবদুল হামিদের মন পড়ে থাকে হাওরাঞ্চলে; ২০১৭ সালে বন্যার খবর শুনে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।

বঙ্গভবনের বাসিন্দা হলেও আবদুল হামিদের মন পড়ে থাকে হাওরাঞ্চলে; ২০১৭ সালে বন্যার খবর শুনে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।

এক দিন সংসদে

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করার পর গত ১১ জুন বঙ্গভবন থেকে বেরিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। ওই দিন সংসদ ভবনে বেশ কিছু সময় কাটান তিনি।

নতুন অর্থবছরের অর্থবিল ও বাজেটের নথিতে সই করে প্রতিবছরের মত কিছু সময় সংসদ অধিবেশনও দেখেন রাষ্ট্রপতি। তবে অন্যবারের মত তাকে ঘিরে আনুষ্ঠানিকতা ছিল না সেদিন সংসদ ভবনে।

অন্যবার ঈদের দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে জাতীয় ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়েন রাষ্ট্রপতি হামিদ। এবার অল্প কয়েকজনকে নিয়ে বঙ্গভবনের দরবার হলে দূরত্বের নিয়ম মেনে ঈদের নামাজ পড়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর্বও এবার ছিল না।

বঙ্গভবনের ‘বন্দি জীবন’

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। এরপর স্বাধীন দেশে আরও ছয়বার তিনি সংসদে নিজের এলাকার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন।

আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন দুই দফা। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বঙ্গভবনের বাসিন্দা হন তিনি।

এই দায়িত্বে ধরাবাঁধা নিয়মের ছকে থেকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্বভাবসুলভ হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন মানুষের খুব কাছে।

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা আবদুল হামিদ বিভিন্ন সময়ে ঠাট্টাচ্ছলে বঙ্গভবনকে তুলনা করেছেন জেলখানার সঙ্গে।

৭৬ বছর বয়সী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “খাঁচার পাখিরে যত ভালো খাবারই দেয়া হোক না কেন, সে তো আর বনের পাখি না। আমি একটা দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। ইচ্ছা করলেই অনেক কিছুই করতে পারি না।”

সুত্র : বিডি নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *