আমি মিঠুন বিশ্বাস, গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলে।
আশ্চর্যরকমভাবে গোছালো আমাদের গ্রাম। ছোট ছোট বাচ্চারা ড্রয়িং কম্পিটশনে যেরকম গ্রামের ছবি আঁকে তারচেয়েও হয়তো কয়েক ডিগ্রি বেশি সুন্দর আমাদের গ্রাম। ছবির মতো। ছবির গ্রামগুলোতে যেমন বাজার থাকে না, আমাদের গ্রামেও সেরকমই ভালো কোন বাজার নেই। একটা কসকো সাবান কিনতেও পাশের বাজারে যেতে হয়।
মা-বাবা গ্রামেই থাকেন। সরকারি চাকুরি করেন, রিটায়ার্ড করবো করবো করছেন। আমার পিতামাতা একা একা থাকেন, রান্নাবান্না করেন, একসাথে খাওয়াদাওয়া করেন, সন্ধ্যার দিকে বারান্দায় বসে দুজনে গল্প করেন, আমাদের দুইভাইয়ের, তাদের মিঠু-টিটুর গল্প করেন।
বাবা-মা আজ গিয়েছিল পাশের বাজারে গ্যাসের চুলা কিনতে। দোকানি হন্তদন্ত হয়ে গ্যাসের চুলা দেখাচ্ছেন। মা এর মধ্য থেকে ভালোমতো একটা দেখে পছন্দ করে ফেললেন। কেনা শেষ। এখন শুধু নেয়ার পালা। মা তাকিয়ে দেখলেন, দোকানদার লোকটা একটা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার মায়ের দিকে। গভীর শ্রদ্ধাবোধ থেকে যে বিষ্ময়ের জন্ম হয় এরকম একটা ঘোরলাগা বিস্ময়। চকচক করছে লোকটার চোখ। বিষ্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই লোকটা বলতে লাগল, ” পুরো গ্রাম এর আগে যা করতে পারে নাই, তা আপনি একা করে দেখিয়েছেন দিদি। আপনার দুইটা ছেলে, দুই ছেলেকেই একসাথে বিসিএস ক্যাডার বানাইয়া ফেলছেন। এটাতো রেকর্ড। দিদি, আপনাকে স্যালুট। ” গ্রাম্য অর্ধশিক্ষিত, মধ্যবয়স্ক লোকটা কাছুমাছু করে সত্যি সত্যি স্যালুট করে বসল।
মধ্যবিত্ত মা আমার, এতো সম্মান সহ্য হয় না, হয়নি কোন কালেই। ছল ছল করে উঠলো তাঁর দুচোখ।
চিরটাকালই মায়েদের এইসব ছলছল করা চোখই অসাধ্য সাধন করে আসছে, বাধ্য করছে সন্তানকে অনেক উপরের আকাশটাকে ছুয়ে ফেলতে। যেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর সন্তান হয়তো তাঁর মতোই ছলছল চোখে কোনদিন বলে উঠে, ” মা, আমি তোমার জন্যই এতদূর আসতে পেরেছি।”