হাওর বাংলা ডেস্ক : মানুষের চেষ্টার অসাধ্য যে কিছু নেই তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের শেখ রহমান চন্দন। আশির দশকে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো এই বাংলাদেশি পড়াশোনার খরচ যোগানোর জন্য হোটেলে থালা-বাসন ধোয়ার কাজ করেছেন। ঘণ্টা চুক্তি হিসেবে মাত্র তিন ডলার পেলেও নিজের স্বপ্নকে ব্যর্থ হতে দেননি কখনো। নিজের সততা, একাগ্রতা আর আত্মবিশ্বাসে আজ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো জর্জিয়া। সেখানকার আইনসভায় সিনেটরের পদ রয়েছে ৫৬টি। গেল ৬ নভেম্বর জর্জিয়ায় মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শেখ রহমান সিনেটর নির্বাচিত হন। স্টেটটির প্রথম মুসলিম আইন প্রণেতাও তিনি।
তবে এই অসাধ্য কাজটাকে নিজের করে নিতে শেখ রহমানকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু পথ, বহু বাধা আর বহু উপেক্ষা। শেখ রহমানের আজ এই সাফল্যের পেছনে যে বড় একটি পরিশ্রম আর সাধনা ছিল তা তার অতীত গল্প থেকেই বোঝা যায়।
বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান শেখ রহমান ১৯৮১ সালের ৭ জানুয়ারি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি ও গ্লোবাল স্টাডিজ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করার পর যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নাম লেখান যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যেটিক পার্টিতে।
১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া শেখ রহমান স্যোশাল অ্যাক্টিভিস্ট হওয়ায় কাজ করেছেন ন্যাশনাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে।
স্টেট সিনেটে লড়াইয়ে নামার অনেক আগে শেখ রহমান নিজেকে ডেমোক্রেট পার্টির একজন যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে তোলেন। বহু রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ওঠা-বসাসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেন। নিজের যোগ্যতা, একাগ্রতা দিয়ে এক সময় জাতীয় পর্যায়ে পার্টির কার্যনির্বাহী সদস্য মনোনীত হন। শুধু তা-ই নয়, শেখ রহমান ডেমোক্রেটিক দলের স্থায়ী সুপার ডেলিগেট হিসেবে দলটির নীতিনির্ধারণী বিষয়েও ভূমিকা রেখেছেন।
চলতি বছরের ২২ মে শেখ রহমান জর্জিয়ার সিনেট আসন ডিস্ট্রিক্ট ৫-এর ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়ে চূড়ান্ত নির্বাচনের পথে এগিয়ে যান। পরে ৬ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ধরাশায়ী করেন রিপাবলিকান প্রার্থীকে।
শেখ রহমানের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের স্থানীয় নির্বাচনে অভিবাসী বাংলাদেশিরা প্রতিনিধিত্ব করলেও জাতীয় পর্যায়ে তেমন বড় কোনো পদে নির্বাচিত হতে পারেননি। এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে অভিবাসী হিসেবে হ্যানসন ক্লার্ক প্রথম হয়ে আছেন। মিশিগানের ডেটট্রয়েটে জম্মগ্রহণকারী এই বাংলাদেশির বাবা মোজাফফর আলী হাশিম সিলেটের বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা ছিলেন। এ ছাড়া ড. নীনা আহামেদের নামও বলা যেতে পারে। যিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে শেখ রহমান বাংলাদেশি হিসেবে জর্জিয়ার সিনেটর নির্বাচিত হওয়ায় বেশ আলো ছড়াচ্ছেন। সেইসঙ্গে অভিনন্দন পাচ্ছেন অভিবাসী বাংলাদেশিদের।
জর্জিয়ার সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ রহমান চন্দন বলেন, ‘আমার এই অর্জন যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি আমেরিকানকে দেশটির মূলধারার রাজনীতিতে টেনে আনতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে তরুণদের। একজন আমেরিকান হিসেবে আমার নির্বাচনী এলাকার সব মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’