নিজস্ব সংবাদদাতা: মুঠোফোনে কথাবার্তা থেকে প্রেম। অতঃপর বিয়ের প্রস্তাব। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একপর্যায়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণ। শেষে বিয়ে করতে রাজি না হওয়া—এমন সব অভিযোগ এনে গতবছরের ২১ মে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক নারী। ওই মামলায় মামুন গতকাল রোববার কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিন চান। ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক মো. রেজাউল করিম আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পিপি আতাউর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী উমর চান (৩৫) হত্যা মামলায় পরিকল্পনাকারী হিসেবে গতবছরের ১১ নভেম্বর আবদুল্লাহ আল মামুন গ্রেপ্তার হন। ২০১৭ সালের ২৬ জুন ঈদুল ফিতরের রাতে খুন হন উপজেলাটির বলিয়ারদী ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা উমর চান। এই মামলায় কয়েক মাস জেল খেটে জামিন মুক্ত হন মামুন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ২০২০ সালে।
ধর্ষণের অভিযোগে হওয়া মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, কয়েক বছর আগে মুঠোফোনে আলাপের সূত্র ধরে বাদীর সঙ্গে মামুনের পরিচয়। একপর্যায়ে এই পরিচয় প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মামুন বাদীর বাসায় নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন। বাদীকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় স্বামী–স্ত্রী পরিচয়ে বেড়াতেন এবং শারীরিক সম্পর্ক করতেন। গেল বছরের ৫ মার্চ সর্বশেষ বাদীর বাসায় যান মামুন। ওই দিনই বাদীকে দুবার ধর্ষণ করেন। ওই দিনই মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দেন বাদী। কিন্তু মামুন বিয়ে করতে রাজি হননি। শেষে মৌলভি ডেকে এনে বিয়ে করেন। কিন্তু রেজিস্ট্রি করেননি। পরে রেজিস্ট্রি করার জন্য বলা হলে মামুন এড়িয়ে যান। প্রতিকার পেতে বাদী সমাজপতিদের কাছে যান। এরপর মামুন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার এসপি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘তদন্তে ধর্ষণ ও খুন উভয় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।’
বাদী বলেন, ‘আমার স্বামী বেঁচে নেই। আমার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্থির করেছিলাম আর বিয়ে করব না। মামুন বিয়ের স্বপ্ন দেখায়। শারীরিক সম্পর্ক করে। শেষে আর বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় গেল বছরের ৭ এপ্রিল মামুনের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করি। আমাকে মর্যাদা না দিয়ে বরং বাড়িতে ফেলে শারীরিক নির্যাতন করে। হত্যার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে মামলা করি।
কারাগারে যাওয়ার আগে এই বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ওই নারীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। কিন্তু প্রেম বা বিয়ে এসব নিয়ে কোনো কথা হয়নি। ধর্ষণের অভিযোগও ঠিক নয়।