নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর রেলওয়ে স্টেশনে কিশোরগঞ্জ ট্রেনের দুইটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ১২ ঘণ্টা পর ওই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটে রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী হলে আটকা পড়া ট্রেনগুলো গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়তে শুরু করে।
দুর্ঘটনার কারণ জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা বিভাগ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিভাগীয় সংকেত ও তারযোগাযোগ প্রকৌশলী সৌমিত শাওন কবিরকে। কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান। তদন্ত শেষে আজ সোমবার ভোরে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে ফেরেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনাকবলিত কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক, গার্ড, সরারচর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রাথমিকভাবে তাঁরা জানতে পেরেছেন, কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সরারচর স্টেশনের ২ নম্বর লাইনে আগ থেকে দাঁড়িয়েছিল। ১ নম্বর লাইনে প্রবেশের সংকেত পায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কিশোরগঞ্জগামী কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস। সংকেত পেয়ে প্রবেশের পর চালক বুঝতে পারেন ট্রেনটি ২ নম্বর লাইনে প্রবেশ করছে। এরই মধ্যে ইঞ্জিন ও দুই বগি ২ নম্বর লাইনে প্রবেশ করে। তৃতীয় বগির অর্ধেক প্রবেশের পর চালক জোরে ব্রেক করেন। তখন ট্রেনের দুটি বগি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে। দুর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। কোনো যাত্রীও আহত হননি। শুধু লাইনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. ইউসুফ বলেন, দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটে রেললাইনে চলাচলের নির্দেশনা পাওয়া যায়। তখন চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ময়মনসিংহগামী আন্তনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। ট্রেনটি ভৈরব স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা বেলা ২টা ৩ মিনিটে। সেই ট্রেনটি ১৩ ঘণ্টা পর রাত ৩টায় ভৈরব স্টেশন ছাড়ে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান বাংলাদেশ রেলওয়ে ভৈরব বাজার ঘাটের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল আলম। তিনি বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে হয়তো তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। তখন দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি থেমে থাকা এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটির লাইনে ইঞ্জিন ছাড়া আরও আড়াই বগি প্রবেশ করে ফেলেছিল। সে সময় ট্রেনটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
গতকাল দুপুরে সরারচর স্টেশনে ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথে সরাসরি ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বেশ কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে। ফলে অসংখ্য যাত্রীকে দুর্ভোগের স্বীকার হতে হয়। পরে আখাউড়া থেকে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে। দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটে ট্রেন লাইন চলাচলের উপযোগী হয়।