হাওর বাংলা ডেস্ক : ‘ভাটির শার্দুল’ খ্যাত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এঁর জন্মদিন আজ। আজ ৭৯ বছরে পা রাখলেন তিনি। ১৯৪৪ সালের পহেলা জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে আদর্শিক রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জন্মগ্রহণ করেন।
হাওরের জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মো. আবদুল হামিদ আজ দেশের টানা দুইবারের রাষ্ট্রপতি। তাঁর পিতা মরহুম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন এবং মাতা মরহুমা তমিজা খাতুন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মো. আবদুল হামিদ মাত্র ২৬ বছর বয়সে ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্থান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
এর আগেই ছাত্রজীবনে ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের সময় তাড়াইলের পুরুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিশাল এক জনসভায় তাঁকে ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধি দেয়া হয়।
নিজ গ্রাম কামালপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু। এরপর ভৈরব কেবি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। এসএসসি পাস করেন নিকলী উপজেলা সদরের গোড়াচাঁদ হাইস্কুল থেকে।
কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ¯œাতক পাস করার পর ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে কিশোরগঞ্জ বারে আইন পেশায় যোগ দেন আবদুল হামিদ।
মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় স্বাধীনতা পদকে ভূষিত মো. আবদুল হামিদ ছাত্রাবস্থায় ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেন।
১৯৬১ সালে গুরুদয়াল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ফলে তৎকালীন পাকিস্থান সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে।
১৯৬৩ সালে তিনি গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং ১৯৬৫ সালে একই কলেজের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ১৯৬৬-৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি কারাবন্দী ছিলেন।
এরপর থেকে ২০০১ সালে স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি একটানা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পে এবং তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (মুজিব বাহিনী) সাবসেক্টরের কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৪ (সাবেক কিশোরগঞ্জ-৫) আসন থেকে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদে তিনি প্রথমে ডেপুটি স্পিকার এবং পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১২ই জুলাই থেকে ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।
অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১লা নভেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ২৭শে অক্টোবর পর্যন্ত বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের ২৫শে জানুয়ারি তিনি নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো স্পিকার নির্বাচিত হন।
২০১৩ সালের ১৪ই মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব লাভ করেন। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।
প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৮ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। ২০১৮ সালের ২৪শে এপ্রিল প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি।
নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে আজ নানা আনুষ্ঠানিকতায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এঁর ৭৯তম জন্মদিন উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে জেলা শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে কিশোরগঞ্জে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এঁর ৭৯তম জন্মদিন উদযাপন করা হবে।