সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / বাজিতপুরে হত্যা মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যান, গ্রেপ্তার ৬

বাজিতপুরে হত্যা মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যান, গ্রেপ্তার ৬

নিজস্ব সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নে বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে ওই ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিহত মজিবুর রহমানের (৬৬) ছেলে জাহিনুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ৫৪ জনকে। প্রধান অভিযুক্ত উপজেলার দিলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া। ২ নম্বর আসামি ইউনিয়নটির ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নান্নু মিয়া। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ জনকে।

হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন নজরুল ইসলাম, নাসির মিয়া, মিনহাজ মিয়া, মহর উদ্দিন, রাতুল মিয়া ও রাকিব মিয়া। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা এজাহারভুক্ত আসামি। তাঁরা দিলালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা এবং চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়ার সমর্থক। নিহত মজিবুর বাহেরনগর গ্রামের বাসিন্দা এবং বাহেরনগর মধ্যপাড়া জামে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এলাকায় তিনি সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গোলাম কিবরিয়া স্থানীয় সাংসদ আফজাল হোসেনের আপন মামাতো ভাই আর মিজবাহ উদ্দিন হলেন সাংসদের আপন ফুপাতো ভাই। আওয়ামী লীগের কর্মী গোলাম কিবরিয়া বর্তমানে সাংসদের অনুগত হয়ে রাজনীতি করেন। মিজবাহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। একসময় অনুগত থাকলেও মিজবাহ বর্তমানে সাংসদের সুনজরে নেই। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে দলীয় সমর্থন চেয়েও পাননি তিনি। ওই নির্বাচনে নৌকার প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন গোলাম কিবরিয়া। ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও জয় পাননি মিজবাহ। ওই নির্বাচনের পর থেকে বর্তমান ও সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বাহেরনগরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন। এই সুযোগে গ্রামগুলোতে সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা সুযোগ পেয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থকদের বাড়িঘরে গণহারে লুটপাট চালাচ্ছেন। নিয়ে যাচ্ছে গবাদিপশুও।

চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রথমত সংঘর্ষটি রাজনৈতিক কিংবা নির্বাচন–সংক্রান্ত নয়। কিন্তু মামলাটি হয়েছে নির্বাচনকে সামনে রেখে। আমাকে এলাকা ছাড়া করতে হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে।’ এই ঘটনার জন্য তিনি সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিনকে দায়ী করে বলেন, মেজবাহ উদ্দিনের জনপ্রিয়তা বলতে এখন আর কিছু নেই। জমি-সম্পত্তি বিক্রি করে শেষ। পুঁজি বলতে মাদক আর প্রতারণা। মেজবাহর পক্ষ এখন এলাকায় গণহারে লুটপাট করছে বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মেজবাহর পক্ষ ৪০টির মতো গরু লুট করে নিয়ে গেছে।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মেজবাহ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি কেমন মানুষ এবং জনপ্রিয়তা আছে কি না, এলাকায় এসে যাচাই করে যান। এর চেয়ে বেশি বলতে চাই না।’

এদিকে গতকাল গোলাম কিবরিয়ার ফাঁসি চেয়ে এলাকায় মিছিল হয়েছে। সাঁটানো হচ্ছে একই দাবিসংবলিত পোস্টারও। সংঘর্ষের দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতায় ছিলেন বাজিতপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সংঘর্ষের পর থেকে ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *