নিজস্ব সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে তিন খুনের ঘটনায় গ্রেফতার আসামি দীন ইসলাম (৪০) আজ শনিবার আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। এর আগে পুলিশের কাছেও স্বীকারোক্তি দেন তিনি। বিকালে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন।
আসামি দীন ইসলামের স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার জানান, পারিবারিক কলহ ও জমি নিয়ে বিরোধেই মূলত তিন খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার রাতে দীন ইসলাম বাড়িতে প্রথমে তার ভাবি পারভিনকে খুন করে। পরে তার ভাতিজা লিয়ন বাড়িতে এলে তাকেও খুন করে। পরে বাড়ির পাশেই মাটি খোড়ার সময় তার ভাই আসাদ বাড়িতে আসলে তাকেও খুন করে। পরে সবাইকেই মাটি চাপা দেয়। আসাদ ও পারভিনের দুটি মোবাইল ফোনও গর্তে রেখে দেয় সে। তিনটি খুন ও গর্তে লাশ রাখার ঘটনা বাড়ির নিকটাত্মীদের কেউ কেউ দেখেছে বলেও পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় গ্রেফতার অপর তিন আসামিকে আজ শনিবার বিকালে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুন নূর আগামীকাল রবিবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। তারা হলেন- নিহত আসাদের মা কেওয়া খাতুন (৬৫), আসাদের বোন নাজমা আক্তার (৪২) ও ভাগ্নে আল আমিন (৩৫)। মামলার অপর আসামিকেরদেকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
উল্লেখ্য, কটিয়াদী উপজেলার জামষাইট গ্রামে নিজ বাড়ির আঙিনা থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন মুদি দোকানদার আসাদ মিয়া (৪৫), তার স্ত্রী পারভীন (৩৮) ও তাদের ছোট ছেলে লিয়ন (৭)।
পুলিশ জানায়, জামষাইট গ্রামের মৃত মীর হোসেনের ছেলে মুদি দোকানি আসাদের সাথে জমি নিয়ে তার ছোট ভাই দীন ইসলাম, বোন নাজমা আক্তার ও মা কেওয়া খাতুনের মধ্যে বিরোধ ছিল। ছোট ছেলে দীন ইসলামের সাথে থাকতেন মা কেওয়া খাতুন। প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। বুধবার রাতে আসাদ, তার স্ত্রী পারভীন ও ছোট ছেলে লিয়ন বাড়ি থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়।
আসাদের মেঝো ছেলে মোফাজ্জল বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়িতে গিয়ে বাবা, মা ও ছোট ভাইকে না পেয়ে থানায় গিয়ে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ আসাদের বাড়িতে গিয়ে রক্তের দাগ দেখে ঘরের পাশেই মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার সময় নিহতের বড় ছেলে তোফাজ্জল ঢাকায় এবং মেঝো ছেলে মোফাজ্জল কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুরে নানার বাড়িতে ছিল। এ ঘটনায় নিহত আসাদের বড় ছেলে তোফাজ্জল বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে কটিয়াদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, তিনজনের লাশের ময়না তদন্ত শুক্রবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। পরে তাদের লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে জামষাইট গ্রামের সামাজিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।