হাওর বাংলা ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ধর্ষণের অভিযোগে গৃহবধূর পরিবারের সদস্যরা বিচার চেয়ে প্রথমে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মস্তুফার শরণাপন্ন হন। পরে যান চেয়ারম্যান ফজলুল করিমের কাছে। তাঁরা মামলায় নয়, সালিসের মাধ্যমে বিচার করে মীমাংসার আশ্বাস দেন। এরপর পার হয়ে যায় ২০ দিন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে মামলার অনুমতিও মিলছিল না, আবার সালিস নিয়েও চলছিল টালবাহানা।
শেষ পর্যন্ত শনিবার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে অষ্টগ্রাম থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার পর ওই দিন বিকেলেই অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার দুজন হলেন হারিছ মিয়া (৩২) ও জাকির হোসেন (৩০)।
গৃহবধূর পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, হারিছ ও জাকির পেশায় জেলে। গৃহবধূর স্বামীর সঙ্গে তাঁদের আগে থেকেই সখ্য আছে। সেই সূত্রে গৃহবধূর বাড়িতে আসা–যাওয়া ছিল তাঁদের। ৪ অক্টোবর পেশাগত প্রয়োজনে গৃহবধূর স্বামী বাড়ির বাইরে ছিলেন। ওই দিন রাত ১১টার দিকে গৃহবধূ টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হন। আগে থেকে ওত পেতে থাকা হারিছ ও জাকির গৃহবধূকে তুলে নিয়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ধর্ষণ করেন। ওই গৃহবধূ পরদিন ঘটনাটি তাঁর স্বামীকে বলেন। এরপর থেকে তাঁরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ওই ঘটনার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
গৃহবধূর স্বামী বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও মেম্বার দুজনের কাছে অনেক গেছি। তাঁরা আমাকে মামলা করতেও দেন নাই, আবার সালিসের মাধ্যমে মীমাংসার ব্যবস্থাও করেন নাই। পরে বাধ্য হইয়া না ডরাইয়া মামলা করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মস্তুফা বলেন, তিনি মামলার করতে বারণ করেননি। তাঁর কাছে আসার পর বিষয়টি তিনি জেনে রেখেছেন আর বলেছেন রাজি থাকলে সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করে দেবেন।
চেয়ারম্যান ফজলুল করিম বলেন, ‘আমরা জনপ্রতিনিধি। এলাকার সব সমস্যার বিষয়ে আমাদের অবগত করা হয়। তার মানে এই নয় যে মামলা করতে বারণ করেছি।’
অষ্টগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান বলেন, হাওরের এই এক সমস্যা। ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও মীমাংসা করতে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সব ঘটনায় সামাজিক সুরাহা চলে না, এই সত্য তাঁরা মানতে চান না। এই ঘটনায়ও চেয়ারম্যান ও মেম্বারের গাফিলতির কারণে মামলা হতে বিলম্ব হয়েছে। এজাহারেও এই কথা উল্লেখ আছে। তিনি আরও বলেন, ওই গৃহবধূর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কিশোরগঞ্জ পাঠানো হয়েছে। তাঁর আজ জবানবন্দি রেকর্ড করার কথা। গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়।
সুত্র : প্রথম আলো।