হাওর বাংলা ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী (২০)। ৯ মাস আগে তিনি লিবিয়ায় যান। পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়েছে, লিবিয়ার দুর্বৃত্তদের গুলিতে বাংলাদেশি নিহতের তালিকায় মোহাম্মদ আলীও আছেন। কিন্তু তালিকায় উল্লেখ করা ঠিকানার মিল থাকলেও বাবার নামে অমিল পাওয়া গেছে।
মোহাম্মদ আলীর ভাই আহমেদ আলী বলেন, ‘পুলিশ বলছে আমার ভাই মারা গেছে, কিন্তু আমরা খবর পাচ্ছি ভাই হাসপাতালে আছে। কোনটা বিশ্বাস করব, বুঝতে পারছি না। আবার বাবার নামেরও মিল নেই। তালিকায় বাবার নাম উল্লেখ করা আছে মুকসেদ মিয়া। কিন্তু আমার বাবার নাম মুসলেম উদ্দিন।’
লিবিয়ায় অভিবাসী খুনের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবের হতাহতের সংখ্যা, নাম ও পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ভৈরবের রয়েছেন ৫ জন। আগের দিন একই দপ্তরের তথ্য ছিল ৮ জন নিহতের। পুলিশের সর্বশেষ দেওয়া নিহত ব্যক্তির নামের সঙ্গে কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের ভিন্নমত পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ভৈরবের কজন রয়েছেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি খালপাড়া গ্রামের আ. আলীর ছেলে সৌরভ আহমেদ সোহাগ (১৯) আছেন মৃতের তালিকায়। বাবা আ. আলী জানালেন, তিনি জানতে পেরেছেন তাঁর ছেলে এখনো বেঁচে আছেন। তবে ঘটনার পর থেকে ছেলের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানান তিনি।
সাদ্দাম হোসেন আকাশ (২৫) উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা। বাবা মেহের আলী। নিহতের তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে। সাদ্দামের বড় ভাই মোবারক হোসেনের দাবি, ইন্টারনেট যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে কল করে তিনি তাঁর ভাইকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখেছেন। অবস্থা খুবই গুরুতর।
রাজন চন্দ্র ঋষি (২৫) পৌর শহরের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা। ছয় মাস আগে লিবিয়ায় যান। রাজনও আছেন মৃতের তালিকায়। তবে রাজনের বড় ভাই সুমন চন্দ্র ঋষি বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর ২৩ মে কথা হয়েছে। ২৫ মে ভয়েস মেসেজ আসে। সেখানে টাকা পাঠানোর অনুরোধ ছিল। ২৬ মে তিন সেকেন্ডের জন্য ভাইয়ের গলার কণ্ঠ কানে আসে। এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মৃত্যুর দুঃসংবাদটি পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।
তবে মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের নিহত সাকিব মিয়ার (২২) পরিবারের সদস্যরা। সাকিব হলেন অভিযুক্ত মানব পাচারকারী জালাল তানজিরুলের আপন ভাতিজা। সাকিবের বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আমার ভাইয়ের (তানজিরুল) মাধ্যমে ছেলে সাকিব ইতালি যেতে চেয়েছিল, কিন্তু ভাগ্যে দিল না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লিবিয়ার ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ভৈরবের রয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবর নগর গ্রামের জিন্নত আলীর ছেলে মাহাবুব মিয়া (২৬), শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর গ্রামের জানু মিয়া (২৪), একই গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে মামুন মিয়া (২১) ও সাদ্দাম মিয়া (২৬)। এদিকে নিহতের তালিকায় থাকা সাকিল নামের এক ব্যক্তির নাম–পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল আলম খান বলেন, ‘সর্বশেষ অনুসন্ধান করে আমরা পাঁচজনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছি। দূরের ঘটনা হওয়ার কারণে নাম–পরিচয় এবং হতাহতের বিষয় নিয়ে কিছুটা ত্রুটি থেকে যাচ্ছে।’
সুত্র : প্রথম আলো ।