নিজস্ব সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের হাওরের মিঠামইনে ব্যাংক থেকে ঋণ তোলার পর দালালের খপ্পরে পড়ে গ্রাহকরা। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এক দালালকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারা পাঠানো হয়। তবে গ্রাহকদের দাবি ব্যাংক দালালদের এ দৌরাত্ম্যের পেছনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজস রয়েছে।
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা সদর বাজারে জনতা ব্যাংক লিমিটেড শাখা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ তোলার পর ঋণের অর্ধেক টাকা খুইয়েছেন মোহামিন নামে এক গ্রাহক। ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই গ্রাহক কামাল হোসেন নামে স্থানীয় এক দালালের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করেন। ঘটনায় পুলিশ দালাল কামালকে আটকের পর কারাগারে পাঠানো হয়।
জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের মৃত শব্দর আলীর ছেলে কামাল হোসেন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, কৃষক মোহামিনের ঋণের প্রয়োজন হলে তিনি প্রায় ২০ দিন আগে মিঠামইন জনতা ব্যাংকে গিয়ে ঋণের ফরম উত্তোলনের চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাংকের লোকজন তাঁকে কোনো ফরম না দিয়ে ঘুরাইতে থাকেন। এর কয়েকদিন পর ব্যাংকের একজন লোক তাঁকে বলেন, ঋণ নিতে চাইলে সে যেন কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ব্যাংকের লোকের কথামতো তিনি কামালকে ব্যাংকের কর্মকর্তা ভেবে তাঁর (কামালের) সঙ্গে যোগাযোগ করলে কামাল ঋণের পরিবর্তে টাকা দাবি করেন। গ্রাহক মোহামিনের টাকার খুব প্রয়োজন বিধায় তিনি কামালকে কিছু টাকা দিতে রাজি হন। পরে দালাল কামাল জনতা ব্যাংক মিঠামইন শাখা থেকে একটি ফরম উত্তোলন করে ৫০ হাজার টাকা ঋণ চান মর্মে ফরমটি পূরণ করে গ্রাহক মো. মোহামিনের স্বাক্ষর নিয়ে কামাল নিজেই ফরমটি ব্যাংকে জমা দিয়ে মোহামিনের মুঠোফোন নাম্বার রেখে মোহামিনকে চলে যেতে বলেন। ফরম পূরণের তিন দিন পর অর্থাৎ ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি কামাল মুঠোফোনে মোহামিনকে জানায় যে, তিনি যেন উপজেলার গোপদীঘি এলাকার চাঁন মিয়াকে নিয়ে ব্যাংকে যান। পরে তিনি (মোহামিন) চাঁন মিয়ার সঙ্গে মিঠামইন বাজারে আসলে কামাল ফোন করে তাঁদের এক ফার্নিচারের দোকানে যেতে বলেন। ফার্নিচারের দোকানে গেলে কামাল জনতা ব্যাংকের একটি বই (যেটার হিসাব নং ০১০০২০৪৪৫৭৮৪৫) মোহামেিনর হাতে দিয়ে চেকের প্রথম পাতার প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ও অপর পৃষ্ঠায় দুটি স্বাক্ষর করতে বলেন। তিনি দালাল কামালের কথামতো তিনটি স্বাক্ষরের পর ৫০ হাজার টাকার চেকটি চাঁন মিয়ার হাতে দিয়ে চাঁন মিয়াসহ গ্রাহক মোহামিনকে ব্যাংকে যেতে বলেন। ব্যাংকে গেলে ব্যাংকের লোকজন জানান, তাঁর হিসাব নম্বরে ৫০ হাজার টাকা জমা হয়েছে বলে তাঁর আরেকটি স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরে চাঁন মিয়া গ্রাহক মোহামিনকে নিয়ে আবার কামালের ফার্নিচারের দোকানে চলে আসেন। দোকান আসলে দালাল কামাল তাঁর (মোহামিনের) হাতে জোরপূর্বক ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এবং বিষয়টি কাউকে জানালে খুন করে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর তিনি গ্রাহক জানতে পারেন যে কামাল জনতা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা না। কামাল জনতা ব্যাংকের ঋণ গ্রহিতাদের নিকট থেকে নিয়মিত জোরপূর্বক এভাবে টাকা রেখে দেন। পরে ১৭ ফেব্রুয়ারি কামালকে আসামি করে মিঠামইন থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন গ্রাহ মোহামিন। ওইদিন সন্ধ্যায় দালাল কামালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তবে ভুক্তভোগী গ্রাহক মোহামিন ও আল আমিন নামে আরেক ঋণগ্রহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে যেয়ে এ ভোগান্তির অভিযোগ করেন, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে। তাঁরা জানান, দালালদের মাধ্যমে প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে প্রায় অর্ধেক টাকা রেখে দেওয়ার এ অপকর্মের সঙ্গে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা জড়িত। তবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক তুলিপ কুমার সাহা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও অন্তত পাঁচজন ঋণ গ্রহীতা অভিযোগ করে বলেন, মিঠামইনে জনতা ব্যাংকে ঋণ প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানিতে অতিষ্ঠ হাওরের অনেক কৃষক। ঋণের অর্ধেক টাকা রেখে দেওয়া হয়।
মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির রব্বানী বলেন, কামালের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংকে মধ্যস্থতা করে গ্রাহকদের তোলা ঋণের টাকার প্রায় অর্ধেক নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেজন্য তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে কামাল এসব কাজ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে করে থাকেন।
মিঠামইন শাখার জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক তুলিপ কুমার সাহা এ বিষয়ে বলেন, তিনি একজন কৃষককে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ঋণ দিতে পারেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০-৮৫ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। কামালের ব্যাপারে তিনি বলেন, কামালও তাঁর গ্রাহক অপরদিকে মোহামিনও গ্রাহক। দুজনের মধ্যে কি হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। কামালের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগ সাজস নেই বলে তিনি বলেন, প্রত্যেক ঋণগ্রহীতা তাঁর ব্যক্তিগত হিসাবের মাধ্যমে টাকা নেন। এখন তিনি মোহামিন কেন কামালের দোকান থেকে ২৫ হাজার টাকা নিলেন এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।