সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / ডিসির নির্দেশের পরও সরানো হয়নি মেলার সরঞ্জাম

ডিসির নির্দেশের পরও সরানো হয়নি মেলার সরঞ্জাম

নিজস্ব সংবাদদাতা : অবশেষে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় ‘কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলার’ নামে অবৈধভাবে চলা র‌্যাফল ড্রসহ অবৈধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

কুলিয়ারচর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কুলিয়ারচর শপিং কমপ্লেক্স দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ দখল করে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে।

জেলা প্রশাসনের নির্দেশে মেলার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকলেও রহস্যজনক কারণে সরানো হচ্ছে না মেলার সরঞ্জাম। অবিলম্বে মেলার স্থাপনা সরানো না হলে আয়োজকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় প্রশাসন।

কুলিয়ারচর উপজেলা সদরের থানা ও প্রশাসনিক কমপ্লেক্সের অদূরে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ দখল করে গড়ে উঠেছে এই অবৈধ মেলা। একটি গার্লস স্কুল ও শিশুদের প্রাথমিক স্কুলের দেয়াল ঘেঁষে তোলা হয়েছে টিনের বেড়া। কোটি টাকা খরচ করে মাসব্যাপী এই অবৈধ মেলার বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় এমপি নাজমুল হাসান পাপনসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বড় বড় ছবি। অভিযোগ রয়েছে, সন্ধ্যা নামলেই মেলায় চলে লাখ লাখ টাকার হাউজি-জুয়াসহ নানা অবৈধ বাণিজ্য। মাঠ বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছে বিদ্যালয় দুটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মেলার জন্য মাঠে নামতে পারছে না কুলিয়ারচর বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেগম নূরুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমনজি মেয়েদের স্কুলের একটি গেটে দোকান নির্মাণ করে গেটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা এ অবৈধ মেলার সঙ্গে জড়িত থাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

কুলিয়ারচর বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের আঙিনাঘেঁষে মাঠে টিন দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা বারান্দা থেকে নামতে পারে না।

কুলিয়ারচর গ্রুপের চেয়ারম্যান মুছা মিয়ার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম নূরুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, মেলার জন্য শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার তেমন ক্ষতি না হলেও বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে মেয়েদের নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। একটি গেট বন্ধ করে দেয়ায় মেয়েদের স্কুলে আসতে-যেতে সমস্যা হয়। মুছা মিয়া স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

সোমবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের চিঠি পেয়ে সাময়িকভাবে মেলার কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু এখনো সরানো হয়নি মেলার সরঞ্জাম।

মেলার আয়োজকরা জানান, দু’দিনের মধ্যেই অনুমতি নিয়ে মেলা শুরু করা হবে। হাউজি, সার্কাস ও বিভিন্ন রাইডসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৭০টি স্টল মেলায় অংশ নেয়। মেলা পরিচালনায় প্রশাসনের অনুমতি থাকার দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত অবৈধভাবে মেলা পরিচালনা করার কথা স্বীকার করেন আয়োজকরা।

মেলা পরিচালনা কমিটির ম্যানেজার মো. মকিন খাঁ বলেন, মেলা আয়োজনে এ পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। হঠাৎ বন্ধের চিঠি পাওয়ায় আতঙ্কে আছি আমরা।

মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান কুলিয়ারচর শপিং কমপ্লেক্সের পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন ভূইয়া বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়েই গত ১৫ সেপ্টেম্বর মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে মাসব্যাপী কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের এমপি ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

তবে জেলা প্রশাসকের অনুমতির কোনো চিঠি দেখাতে পারেননি তিনি। পরে মেলাটি অবৈধভাবে চলছিল বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে অবৈধ কিছু হচ্ছে না। প্রতিদিন র্যাফেল ড্রতে চারটি মোটর সাইকেল দেয়া হয়। হঠাৎ বন্ধের চিঠি পাওয়ার পর আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন করে অনুমতি নিয়ে মেলা চলবে।

মেলা বন্ধের চিঠি আয়োজকদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুলিয়ারচর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই তালুকদার। তিনি বলেন, এরপরও মেলা চালানো হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুটি বিদ্যালয়ের লেখাপড়া বিঘ্নিত ও ইভটিজিংসহ অসামাজিক কাজের আশঙ্কায় অবৈধ মেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে রোববার সন্ধ্যায় চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, কুলিয়ারচরে কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলা করায় লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হওয়া এবং শিক্ষার্থীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় মেলার অনুমোদন দেয়া হয়নি। এরপরও মেলা আয়োজন করে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর ২২ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে মেলা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশের পরও মেলা থেকে সরঞ্জাম সরানো না হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *