হাওর বাংলা ডেস্ক : আজ ভোরেও সূর্য উঠবে। তবে আজকের সূর্যের মর্ম বা মাহাত্ম্য অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে আলাদা। আজ যে বাঙালির যুদ্ধজয়ের আনন্দের দিন, আত্মপরিচয় লাভের দিন। ৪৯ বছর আগের এই দিনে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয়ের ভেতর দিয়ে অর্জিত হয়েছিল জাতীয় স্বাধীনতা; বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছিল একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড—বাংলাদেশ। দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীলগ্নে এই সূর্য তাই নতুন রূপে নতুন ‘আলোকের ঝর্ণাধারা’র বার্তা নিয়ে আসবে বাঙালির জীবনে। দিনটির আনন্দ তাই বাঙালি জাতির কাছে অপরিসীম।
আজ ১৬ ডিসেম্বর। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় এই বিজয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে মাথা নিচু করে আত্মসমর্পণ করেছিল বিজয়ী বীর বাঙালির সামনে। স্বাক্ষর করেছিল পরাজয়ের সনদে। সেই দিন থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আজ সেই মহান বিজয় দিবস। আজ লাল-সবুজের উৎসবের দিন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ বছর বিজয় দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন।’
আজ জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষ শহীদের উদ্দেশে নিবেদন করবে শ্রদ্ধার ফুল। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সব প্রান্তের মানুষ উদযাপন করবে বিজয় দিবস।
এবারের বিজয় দিবস উদযাপন হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে। আগামী বছর স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ। এসব কারণে এবার বিজয় দিবস উদযাপন হতে পারত ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। সে কারণে এবার বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ হবে না।
প্রত্যুষে ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে যথাযোগ্য মর্যাদায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি সমন্বিত দল সশস্ত্র অভিবাদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বাধীনতাযুদ্ধে নিহত সবস্তরের শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। সেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, কূটনীতিকরা, তিন বাহিনীর প্রধানরা, সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সাভার এরিয়া কমান্ডারসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা এবং অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও দিবসটি উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভূগর্ভস্থ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যভিত্তিক পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্পসংখ্যক দর্শনার্থীকে সেখানে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে। ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য কামনা এবং দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।