হাওর বাংলা ডেস্ক : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মিজানুর রহমান মিজান গ্রেপ্তার হয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলশান ১ নম্বরের ৮ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ডিবির ভাষ্য, সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের যুবদল নেতা সাইফুলকে সঙ্গে নিয়ে করা ষড়যন্ত্রের দুটি অডিও ক্লিপ তাদের হাতে এসেছে।
অডিও বার্তা অনুসারে, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের একাংশ আওয়ামী লীগের সমর্থক সেজে জাল ভোট দেবে এবং মারপিটও করবে। আরেক দল সেসব দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় তুলে ছড়িয়ে দেবে। এই লক্ষ্যে সোমবার দুপুরে মিজানুর রহমান শিমুলিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের গোপন ক্যামেরাও দেন। সেই ক্যামেরা ও বিশেষ ঘড়ি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও ডিবি জানায়।
ডিবি সূত্র জানায়, আইসিটি অ্যাক্টে মামলা প্রক্রিয়াধীন। তবে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। রাতে যখন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মিজানকে গ্রেপ্তার করতে তাঁর বাসায় যান তখন তিনি ফেসবুক লাইভে এসে বিষয়টি জানান। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, বাসার দরজা ভেঙে মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, তাঁর (মিজান) বিরুদ্ধে নাশকতার ষড়যন্ত্র ছাড়াও আগে থেকেই একাধিক মামলা ছিল। ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য ছিল দুটি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাঁরা বলতেন, জাল ভোট হয়েছে। বিএনপি প্রার্থী জিতলে তাঁরা বলতেন, জাল ভোট না হলে তাঁরা আরো বেশি ভোট পেতেন।
কন্সপেরেসি লিংক নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলেও মেজর (অব.) মিজানের কথোপকথনের অডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে। ক্লিপটি মিজানেরই জানিয়ে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, কথোপকথনের দুটি অডিও আরো যাচাই-বাছাই চলছে।
অডিওতে যা আছে : প্রথম অডিওতে মিজানুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে একটা ছেলে, পারলে দুটো ছেলে দাও। যারা আওয়ামী লীগের ব্যাজ লাগিয়ে ঘুরতে পারবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের লোক নাও, যারা মনে মনে বিএনপি।’ মিজানুর আরো বলেন, ‘তিনটা ছেলে সিলেক্ট করো। ওরা নৌকার ব্যানার নিয়ে ঘুরবে। ওদের টাকা-পয়সা দিয়ে দেবোনে। ইলেকশনের দিন যন্ত্রপাতি দিয়ে দেবোনে।’ দ্বিতীয় অডিওতে সাইফুল বলেন, ‘লোক ঠিক করছি। বাসাডা ঠিক করতে পারি নাই এখনো। তখন মিজানুর বলেন, একটা বাসা ঠিক করো। দুই চার পাঁচ হাজার টাকা যদি দিতেও হয়, দিয়ে দাও।’ একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এগুলারে একটা গাড়ি নিয়া ঢাকায় চলে আসবা। ওদের আমি শিখাইয়া, ট্রেনিং দিয়ে ছেড়ে দিবো। আমি বলবোনে কোথায় আসবা।’
মিজানুর রহমানকে গুম করার চেষ্টা হয়েছিল দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তা করতে ‘না পেরে’, মিজানুরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের উদ্দেশ্যে ‘কাল্পনিক অডিও ক্লিপ’ ছাড়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে এক বিবৃতিতে ফখরুল দলের এই নেতার মুক্তিও দাবি করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, অতীতেও বিএনপির বিভিন্ন নেতাকে তুলে নিয়ে গুম করে দেওয়া হয়েছে।