টিটু দাস: আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহরে হানাদার বাহিনী নৃশংসভাবে খুন করেছিলেন দেশের অগ্রণী কিছু মানুষদের। ওই তালিকায় ছিলেন কিশোরগঞ্জের হাওরের অষ্টগ্রাম উপজেলার অঁজোপাড়া গায়ে জন্মগ্রহণ করা প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ শহীদ বুদ্ধিজীবি ডা: আবদুল আলীম চৌধুরী। এদিকে, আবদুল আলীম চৌধুরীর জন্মস্থানে একটি পাঠাগার ও প্রতিকৃতি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার খয়েরপুর গ্রামে ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুল হেকিম চৌধুরী এবং মা সৈয়দা ইয়াকুতুন্নেছার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তন ছিলেন আবদুল আলীম। তিনি ১৯৪৫ সালে কিশোরগঞ্জ হাই স্কুল (বর্তমানে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৮ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে চলে যান লন্ডনে। ১৯৬১ সালে রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস থেকে ডিপ্লোমা ইন অপথালমোলজি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে ২১ ডিসেম্বর শেরপুরের মেয়ে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই কন্যা ডা: ফারজানা চৌধুরী নিপা ও ডা: নুজহাত চৌধুরী শম্পা ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কারফিউ উঠে গেলে ড. আলীমের কাজ শুরু হতো। গাড়ির বনেট ভর্তি করে ওষুধ সংগ্রহ করতেন বিভিন্ন ফার্মেসি আর ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে। এগুলো আবার মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন ঘাঁটিতে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করার জন্য একটি গোপন হাসপাতাল ছিল। সেখানে ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বি এবং আরো অনেকেই ওখানে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী মজুর, দারোয়ান, শ্রমিক জেলে এবং দরিদ্র রোগীর কাছ কখনো টাকা-পয়সা নেন নি বরং তাদের চোখে-ছোট বড় অপারেশন করেছেন বিনামূল্যে। ওই সময় গ্রামে এসেও বিনামূল্যে মানুষদের চিকিৎসা দিয়ে গেছেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আল-বদর বাহিনী বিকেল সাড়ে ৪টায় ডা: আলীম চৌধুরীকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং ১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ডা. আবদুল আলীমের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়।
খয়েরপুর গ্রামের কয়েকজন তরুণ বলেন, তরুণ প্রজন্ম যেন শহীদ বুদ্ধিজীবি ডা: আবদুল আলীম চৌধুরী সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্য একটি প্রতিকৃতি। এছাড়া ওনার পৈত্রিক ভিটায় একটি ভাস্কর্য ও পাঠাগারটি বড় করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবি ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীর গ্রামের একটি লাইব্রেরী ও ওনার প্রতিকৃতি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।