সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / জাতির পিতার অবমাননা মেনে নেয়া হবে না : জেলা প্রশাসক

জাতির পিতার অবমাননা মেনে নেয়া হবে না : জেলা প্রশাসক

নিজস্ব সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ায় রাতের আঁধারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীণ ভাস্কর্য কতিপয় রাষ্ট্রদ্রোহী দুর্বৃত্ত কর্তৃক ভেঙ্গে ফেলার ঘৃণ্য ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী ফোরাম। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ফোরামের অংশগ্রহণে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসন আয়োজিত প্রতিরোধমূলক সমাবেশ ও আলোচনা সভা থেকে এই নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এই প্রতিরোধমূলক সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।

এতে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. সায়েদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ কিরণ শংকর হালদার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. সোলায়মান, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহবুব ইকবাল, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. এহসানুল হক, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. দীন মোহাম্মদ, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ ওয়াহাব বাদল, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাহাদুর আলী, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আমিনুল এহসান, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ শরীফ সাদী প্রমুখসহ কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও বিভাগের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিরোধমূলক সমাবেশ ও আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, যে নামটি বাংলাদেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, তা হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সকল শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর বাঙ্গালী জাতি মহান মুক্তিযু্দ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এদেশের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনে।

বাংলাদেশ তথা বাঙ্গালী জাতির অস্তিত্বের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন পথ প্রদর্শক, আলোর দিশারী ও সার্বজনীন নেতা। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে বঙ্গবন্ধুর নাম তাই অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা মূলত সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চেতনা ও অস্তিত্বের মর্মমূলে কুঠারাঘাতের সামিল।

বক্তারা দৃঢ়ভাবে তাদের বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য চিরায়ত বাঙ্গালী জাতির অবিনাশী চেতনার মূর্ত প্রতীক। বিভিন্ন জাতি রাষ্ট্রের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিকাশের পরিচায়ক হিসেবে আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে এমনকি অনেক মুসলিম দেশে মহান নেতাদের ভাস্কর্য রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন সংগ্রাম, তাঁর ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হানার মাধ্যমে মূলত বিশ্বজনীন ঐতিহ্য ও চেতনাকেই আঘাত করা হয়েছে।

জাতির পিতার এ অবমাননা মেনে নেয়া হবে না। দুর্বৃত্তকে প্রতিহত এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে- এগিয়ে যেতে হবে আরও অনেক দূর। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে, শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে, প্রকৃত দেশপ্রেম নিয়ে সচেতনতার সঙ্গে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। সেটাই হবে জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের শ্রেষ্ঠ উপায়।

তিনি অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার সাথে জড়িত দুস্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং একই সাথে নতুন ও অনাগত প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনা ছড়িয়ে দিতে সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *