টিটু দাস : তাঁর বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গাজুড়ে চালের বস্তার স্তূপ টিলাসদৃশ হয়ে উঠেছে। ডাল, তেল, পেঁয়াজ, লবণ, আলুও স্তূপাকারে রাখা হয়েছে। কখনো তিনি তদারকি করছেন এসব কেথায় কোথায় যাবে তা; কখনো দায়িত্বরতদের তাগাদা দিচ্ছেন কাজের অগ্রগতি কতটুকু- তা জানতে।
প্রায় সারাক্ষণই বাজছে তার মোবাইল ফোন; এই সরকারি দপ্তর-স্থানীয় প্রশাসন তো ওই পুলিশ প্রশাসনের ফোন। ফোন করে চলছেন তার কর্মী-অনুসারীরা, সাংবাদিক, পরিচিতজনেরা। বিরতি বিরতিতে তার কাছে খবর আসছে অষ্টগ্রাম উপজেলার করোনা পরিস্থিতির সবশেষ হালচালের, ইটনার কোন কোন ইউনিয়নে অভাবী মানুষ খাবারের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন কিংবা মিঠামইনের বাড়িতে বাড়িতে সাহায্য পৌঁছানোর তথ্যের।
সবকিছুই তিনি শুনছেন, নোট রাখছেন। খেয়াল করলে দেখা যাবে কপালে তার দুশ্চিন্তার কুঞ্জন স্পষ্ট, কথাতেও কখনো কখনো হতাশা। কিন্তু কাজে হতাশার কোনো চিহ্ন নেই। সকাল থেকে রাত অবধি সবকিছু সামলে নিজের দায়িত্ব পালনে সবটুকু চেষ্টা করে চলছেন তিনি।
কখনো কর্মী-সমর্থক, কখনো পুলিশ, কখনো বা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ছুটছেন তিনি সৃষ্ট বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দিতে। দেশের চলমান অস্থির সময়ে মানুষকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে ছুটে চলছেন বিরামহীন- বাড়ি বাড়ি। হতাশাগ্রস্ত মানুষ, শ্রমজীবী, কৃষকের হাত ছুঁয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি সাধারণ ছুটিকালীন ব্যতিব্যস্ত ও দায়িত্বসচেতন এ মানুষটি হলেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। পরিচয় তাঁর আরও আছে। তিনি ভাটির শার্দুলখ্যাত মাটি ও মানুষের নেতা বর্তমান রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে। তবে ইতোমধ্যে তিনবারের সাংসদ তৌফিক তাঁর কাজ ও ভালোবাসা দিয়ে বাবার পরিচয়ের বর্ম ছেড়ে নিজের পরিচিতি তৈরি করে নিয়েছেন।
বরাবরই কিছুটা প্রচারবিমুখ আর অতিসাধারণ বেশভূষার কারণে নন্দিত এমপি তৌফিক দেশব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ লাঘবে নিজ সংসদীয় এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। হাওরবেষ্টিত ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইনের বিশাল জনপদের মানুষের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রায় সোয়া তিন লাখ ভোটারের এই সুবিশাল জনপদের প্রতিটি পাড়া-গ্রামে তিনি সরকারি – ব্যক্তিগত উদ্যোগে সব রকমের সহযোগিতা ও ত্রাণ পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানালেন আলাপচারিতায়।
এমপি তৌফিক জানান, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ ধেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় তিনি কাজের তাগিদে রাজধানী ঢাকাতে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু নিজ এলাকার জনগণের পাশে দাড়ানোর কথা চিন্তা করে হাওরে ফিরে আসেন ৩০ মার্চ। এই ভয়াল অবস্থার অবসান না হওয়া পর্যন্ত তিনি তার সংসদীয় আসনের মানুষের পাশে থাকতে চান।
মূলত রাজধানী থেকে হাওরে ফিরেই নিরবচ্ছিন্নভাবে সাধারন মানুষকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা, স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য দিনভর ছুটে চলছেন। নিজের সংক্রমণের ভয়কে পরোয়া না করে হাওরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটছেন মানুষের দোড়গোড়ায়।
যেই মানুষের পবিত্র আমানত ভোটে তিনি সাংসদ হয়েছেন, এই করোনাকালের ভয়াল দিনে সেইসব মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনকল্পে তার এ ছুটে চলা বলে জানান এমপি তৌফিক।
আলাপকালে তিনি জানালেন, কনোনার ভয়ে কাজ হারিয়ে বাড়িতে থাকা সাধারণ মানুষের যেন খাবারের কষ্ট না হয় এজন্য তিনি সচেষ্ট রয়েছেন। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে প্রাপ্ত ত্রাণের চালসহ অন্যান্য সহায়তা নিজেই পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করেছেন মানুষের দরজায়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ত্রাণ পযার্যপ্ত না হলেও নিজ অর্থায়নে মানুষের চাহিদা মেটাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অষ্টগ্রাম-ইটনা-মিঠামইন এ তিন উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নে খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়েছেন। সেগুলো ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা কৃষক ও হতদরিদ্রের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, তেল, আলু ও পেঁয়াজ। ২৪টি ইউনিয়নে বিতরণের জন্য এরইমধ্যে ৩০০ বস্তা চাল, ১৪ বস্তা আলু, ১২ বস্তা ডাল ও ৩০০ লিটার সয়াবিন তেল পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম যতদিন প্রয়োজন চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।
এমপি তৌফিক কাজ করছেন করোনায় সংক্রমিত বা আক্রান্তদের চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিয়েও। সন্দেহভাজন ব্যক্তি চিহ্নিতমাত্রই তাকে পরীক্ষার জন্য দ্রুত ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
করোনায় সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা দিতে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না তৈরি হয় সে বিষয়েও তিনি সতর্ক। ইতোমধ্যে তার এলাকার সবগুলো সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের পারসোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) প্রাপ্তির ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
করোনার এই সময়ে সবেচেয় বেশি হতাশ হয়ে পড়া হাওরের কৃষকদের পাশে বড় আস্থা হয়ে উঠেছেন এমপি তৌফিক।
ইতোমধ্যেই পেকে গেছে হাওরের ধান। সুবিশাল হাওরজুড়ে এখন কেবল রোদে সোনালী বিকিরণ। কিন্তু ধান পাকলেও তা কাটা ও মাড়াই নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা।
এই সমস্যা সমাধানে এমপি তৌফিক নিজে উপজেলার ও ইউনিয়নে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের ধান কাটতে শুরু করেছেন। ধান কাটার জন্য তিন উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কাঁচি বিতরণ করছেন। এছাড়া সরকারিভাবে ধান কাটার মেশিন আনার ব্যবস্থা করছেন এমপি তৌফিক।
ধান কাটার বিষয়ে গুরুত্ব তৈরি করতে এমপি তৌফিক নিজেই কাঁচি হাতে নেমে গেছেন মাঠে। ইতোমধ্যে তিন দফা তিনি ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন নিজে। ধান কাটার ক্ষেত্রে দেখা দেওয়া প্রতিটি সমস্যা সমাধানেরও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ফলে হাওরের চাষিরা ধান কাটার ক্ষেত্রে মনোবল ফিরে পেয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবী আর দলীয় অনুসারীদের সমন্বয়ে এরইমধ্যে হাওরের তিন উপজেলায় অভাবীদের খাদ্য সহায়তায় নিজ বাড়িতে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রেখেছেন এমপি তৌফিক। প্রয়োজন অনুযায়ী হাজারো মানুষকে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে খাদ্য উপকরণ।
এতেই থেমে নেই হাওরের মানুষের কান্ডারী হয়ে ওঠা এমপি তৌফিক। করোনা থেকে মানুষ যেন রক্ষা পেতে পারে এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কাজও অব্যাহত রেখেছেন তিনি।এর অংশ হিসেবে তিনি নিজেই একাধিকবার হ্যান্ডমাইকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছেন। সংক্রমণ রোধে মানুষ যেন ঘরে থাকে সেজন্য সবরকমের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
সবমিলিয়ে কিশোরগঞ্জের পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য জেলার মতো দিনকে দিন কিছুটা অবনতি হলেও অষ্টগ্রাম, ইটনা আর মিঠামইন হাওরবাসী এই ঘোর দুর্দিনে আতঙ্কিত হলেও আশা হারাননি। তাদের আস্থার জায়গা হিসেবে এমপি তৌফিককে সব রকমের প্রয়োজনে পাশে পাচ্ছেন তাঁরা।