শফিক আদনান : হাওরবাসীর অপেক্ষার দিন শেষ হলো। পূরণ হলো তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। শুরু হলো সারা দেশের সঙ্গে হাওরের সরাসরি সড়কপথের যোগাযোগ। গতকাল রবিবার থেকে চার চাকার যানবাহন নিয়ে কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম যেতে পারছে লোকজন। ছবির মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সারাবছর ব্যবহার উপযোগী (অলওয়েদার) সড়কে চলাচল করছে যানবাহন। স্থানীয়রা এই দিনটিকে হাওরে নতুন যুগের সূচনা বলে অবিহিত করেছেন।
আজ রবিবার জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা ও চামড়াঘাট, ইটনা উপজেলার বরিবাড়ি ও বলদা এবং মিঠামইন উপজেলার শান্তিপুর ঘাটে পাঁচটি ফেরি একযোগে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় সরাসরি যানবাহন চলাচল।
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু ও কিশারগঞ্জ-৪(ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরিগুলো উদ্বোধন করেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত হাজারো জনতা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। তারা তখন এই বিপুল উন্নয়নে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
কিশোরগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ইটনা-বরিবাড়ি-চামড়াঘাট সড়কের ধনু নদীতে চামড়াঘাট, বরিবাড়ি ও বাউলাই নদীতে বলদা ফেরি সার্ভিস এবং কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট-মিঠামইন সড়কের ধনু নদীতে বালিখলা ও ঘোড়াউত্রা নদীতে শান্তিপুর ফেরি সার্ভিস চালু উপলক্ষে বালিখলা বজারে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম সোপান, কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম, মিঠামইন উপজেলা চেয়ারম্যান আছিয়া আলম, ইটনা উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, করিমগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুল কাইয়ুম, মিঠামইন সদর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফ কামাল, সুতারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খান দিদার। এ সময় করিমগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা ইয়াসমিনসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সাংসদ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, চিরকাল যে এলাকাটি অবহেলিত ছিল। সেই এলাকা আজ উন্নয়নে ঝকমক করছে। আগে নৌকা ছাড়া হাওরের লোকজন চলাচল করতে পরত না। এখন প্রায় সারা বছরই সড়ক যোগাযোগের সুবিধা পাবে তারা। আর কিছু কাজ শেষ হলে সারা দেশের সঙ্গে বছরজুড়ে সড়ক পথে চলাচল করতে পারবে হাওরবাসী। যা তারা কোনোদিন স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারেনি। এগুলো আজ স্বপ্ন নয়, বাস্তব।
সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করে উচ্ছসিত কণ্ঠে বলেন, হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কটাক্ষ করে আগে বলা হতো, বর্ষায় নাও, শুকনায় পাও-কিন্তু সেদিন আর নেই। হাওরে সারা বছর উপযোগী রাস্তাঘাট নির্মাণ হয়েছে। ফেরি সার্ভিস চালুর মাধ্যমে সারা দেশের সঙ্গে হাওরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হলো। ভবিষ্যতে এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে হাওরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। শিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থান বাড়ানো হবে।
সমাবেশের পর ফিতা কেটে বালিখলা ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের পর ওই ফেরি দিয়ে দুই সংসদ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের গাড়ি বহর নিয়ে ধনু নদী পার হন। পরে সাংসদ চুন্নু হুটখোলা জিপে চড়ে ও সাংসদ তৌফিক তার ফুফু আছিয়া আলমকে নিয়ে নিজে গাড়ি চালিয়ে সেখান থেকে মিঠামইনে যান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম জানান, করিমগঞ্জ, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় মোট ১২৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৭কিলোমিটার অলওয়েদার (আবুরা সড়ক) রোড, ৩৫ কিলোমিটার সাবমার্জেবল(ডুবোসড়ক), ২২টি সেতু ও ১০৪টি কালভার্ট নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ছিল কিছু ফেরির ব্যবস্থা করা। সেগুলো আজ চালু হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এ আমূল পরিবর্তন, হাওরবাসীর আর্শিবাদ হয়ে থাকবে।