সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / ওই মহামানব আসে…

ওই মহামানব আসে…

মো. আবদুল হামিদ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হচ্ছে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিতে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্ত স্বদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন আমাদের মহামানব। সেদিনের স্মৃতি আমার জীবনে চিরজীবন্ত হয়ে আছে। গোটা বাঙালি জাতি তার আগমনের প্রতীক্ষায় ক্ষণ গুনছিল। সবার হৃদয়ের মধ্যে গুঞ্জরিত হচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের সেই পঙ্‌ক্তি- ‘ওই মহামানব আসে’।

আমি মনে করি, সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশের জন্য ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। আজ থেকে শতবর্ষ আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়তো সম্ভব হয়ে উঠত না। বাঙালি জাতি সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতিতে ভারতীয় উপমহাদেশে সব সময়ই অগ্রগণ্য ছিল। কিন্তু বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্র ছিল না। বঙ্গবন্ধু এই অগ্রসর জাতিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র  দিয়ে জাতির হাজার বছরের পরিক্রমায় এক অনন্য স্থান অধিকার করে নিয়েছেন। তাই আমরা তাকে বলি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।

নিজেকে আমার পরম সৌভাগ্যবান মনে হয় যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমরা একই আকাশের নিচে থেকেছি। একই বায়ুমণ্ডল থেকে নিঃশ্বাস গ্রহণ করেছি। আমার গোটা রাজনৈতিক জীবনে তারই আদর্শের পতাকা বহন করে নিয়ে চলেছি; এটাও কম গৌরবের নয়। আমি তার জন্মশতবার্ষিকী দেখে যেতে পারছি। বঙ্গবন্ধুর অনেক সহকর্মীর এই সৌভাগ্য হয়নি। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এমন সময় পালিত হচ্ছে, যখন আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত। রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার দুই মেয়াদে মুজিববর্ষ নিঃসন্দেহে এক অনন্য মাইলফলক।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

বস্তুত আমার জীবনে বঙ্গবন্ধু ধ্রুবতারার মতো হয়ে আছেন। দীর্ঘ ৭৭ বছরের জীবনে যখন পেছন ফিরে দেখি; দেখতে পাই আমার জীবনের যে অভিমুখ ও অর্জন, সবই বঙ্গবন্ধুর অবদান। মাত্র ২৫ বছর বয়সে আমাকে তিনি জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমি হয়েছিলাম তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব একজন তরুণের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দেখতে পাওয়া। আমার মতো লাখো তরুণের মধ্যে কেবল নয়, গোটা জাতির ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার তারুণ্য থেকেই তাই বাঙালির স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন। শুধু স্বপ্ন দেখেননি; বাস্তবায়নে রাতদিন কাজ করেছেন। আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো গোটা জাতি তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখার স্মৃতি গোটা জীবনে ভোলার নয়। সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঙ্গে আগেও বেশ কয়েকবার আমি সেই স্মৃতিচারণ করেছি। আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের কাউন্টডাউন উপলক্ষে স্নেহভাজন সম্পাদকের অনুরোধে সাড়া দিয়ে আরেকবার সংক্ষেপে বলি।

১৯৬৪ সালের কথা। বাঙালির প্রাণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তখনও বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি। আমরা তাকে ‘মুজিব ভাই’ ডাকি। আমি তখন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মুজিব ভাই ওই সময় কিশোরগঞ্জ আসেন আওয়ামী লীগের সমাবেশে। প্রিয় নেতাকে কাছে থেকে দেখব, তার সঙ্গে কথা বলব- এই ইচ্ছা থেকেই ছাত্রলীগের দু-তিনশ’ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে গেলাম রঙমহল সিনেমা হলের সামনে। ভেতরে জায়গা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের ঢুকতে দিলেন না। তাদের বক্তব্য, এটা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠান নয়। তারপরও আমরা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকলাম। নেতা বের হলে প্রয়োজনে রাস্তার মধ্যেই তার সঙ্গে দেখা করব, কথা বলব। সন্ধ্যার আগেই সমাবেশ শেষ হলো। বঙ্গবন্ধু বেরিয়ে আসছেন। তাৎক্ষণিক স্লোগান ধরলাম- ‘মুজিব ভাই যেখানে, আমরা আছি সেখানে’। বুঝতে পারলাম, দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি। নেতা এসে জড়িয়ে ধরতেই পরিচয় দিয়ে অভিযোগ জানালাম, ‘আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসেছিলাম আপনার বক্তৃতা শুনতে; কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের হলের ভেতরে ঢুকতে দেননি।’ মুজিব ভাই তখন সবার সামনেই বললেন, ‘আরে আওয়ামী লীগ বাদ দে, তোরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই আমার আসল শক্তি।’ নেতার সেই অভয় বাণী আমার কানে এখনও বাজে। তার আলিঙ্গনের স্পর্শ আমি এখনও অনুভব করতে পারি। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিই আমার রাজনীতি। তার জন্য প্রয়োজনে জীবন দেব।

কয়েক বছর পর, ‘৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষিত হলো। নেতার নির্দেশে আমরাও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সম্ভবত ‘৬৭ সালের প্রথম দিকে সিলেটে গিয়ে গ্রেপ্তার হলেন তিনি। খবর পেলাম, পুলিশ তাকে বাহাদুরাবাদ মেইল ট্রেনে করে সিলেট থেকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাবে। আমরা চার-পাঁচ হাজার ছাত্র জড়ো হয়ে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন অবরুদ্ধ করে ফেললাম। রাত ১২টায় ট্রেন এলো। তাকে রাখা হয়েছিল ফাস্র্দ্ব ক্লাসের একটি কামরায়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সেখানে গেলাম। ‘হামিদ’ বলেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বিস্মিত হলাম, একবারের দেখাতেই নেতা আমার নাম মনে রেখেছেন! ট্রেনের বগির দরজায় দাঁড়িয়ে একটি হ্যান্ডমাইকে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি ১০-১২ মিনিট বক্তৃতা করলেন। সবশেষে আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘আন্দোলন চালিয়ে যা, জয় আমাদের হবেই।’ তারই নির্দেশে পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কিশোরগঞ্জে সংগঠন গোছানোর কাজ করতে থাকি।

‘৭০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় দেখা করতে এলে বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন- ‘তোকে ইলেকশন করতে হবে। তুই এমপিএ ইলেকশনের প্রস্তুতি নে।’ বঙ্গবন্ধুকে জানালাম, এমপিএ নয়; এমএনএ ইলেকশন করতে চাই। কিন্তু তিনি বললেন, ‘তুই ছোট, প্রথমে এমপিএ ইলেকশন কর। পরিচিত হ। পরে বড়টা করবি।’ এপ্রিল মাসে আবার ঢাকায় এলাম দেখা করতে। এবার আমাকে দেখেই তিনি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। ভাবলাম, আমার কাপড়চোপড়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না। হাসতে হাসতেই বঙ্গবন্ধু বললেন, আমার এলাকায় এমএনএ প্রার্থী সাবেক জজ সাহেব মারা গেছেন। বললেন- ‘আমি কি আর তোর কথা না রাইখা পারি? তুই তো আমার দাদা।’ শেখ আবদুল হামিদ যে বঙ্গবন্ধুর দাদা- সেটা তখনও আমার জানা ছিল না। জজ সাহেব নেই, তাই বঙ্গবন্ধুর মনোনয়ন পেয়ে আমি এমএনএ নির্বাচনে অংশ নিলাম। ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলীর জনসভায় বঙ্গবন্ধু আমার জন্য ভোটও চাইতে গেলেন। কোনো কোনো জায়গায় নৌকা থেকেও বক্তৃতা করলেন। নির্বাচিত হলাম সর্বকনিষ্ঠ এমএনএ হিসেবে।

স্বাধীন দেশের পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমার আগ্রহের কেন্দ্রে। লক্ষ্য করেছি, পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্পিকার বিব্রত হতেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হতেন না। ১৯৭৩ সালের পার্লামেন্টে আতাউর রহমান খান, এমএন লারমাসহ বিরোধী দলের কয়েকজন এমপি ছিলেন। তখনও দেখেছি, তারা কথা বলতে চাইলেই সুযোগ পেতেন। প্রায় সময় বঙ্গবন্ধুই স্পিকারকে বলে সে সুযোগ করে দিতেন। আমি সব সময়ই বলি, বঙ্গবন্ধুই আমার রাজনৈতিক গুরু, যা শিখেছি তার কাছ থেকেই শিখেছি। সেই শিক্ষাগুলোই পরে প্রয়োগ করেছি নিজের রাজনৈতিক জীবনে। আমি নিজে জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকা অবস্থায় বিরোধী দলকে যে সুযোগ দিতাম, সেটাও আসলে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই শেখা।

আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, মানুষের সঙ্গে মিশতে পারার অসম্ভব গুণ ছিল বঙ্গবন্ধুর ভেতরে। তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন জনগণের কাছে যাওয়ার মাহাত্ম্য। আমার নির্বাচনী এলাকা তো বটেই, পুরো কিশোরগঞ্জে গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছি আমি। কিশোরগঞ্জের এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই, যেখানকার মানুষজনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। মানুষকে নামধামসহ মনে রাখতে পারাটাও আমি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই শিখেছি। যদিও বঙ্গবন্ধুর মতো স্মৃতিধর হতে পারিনি।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক অধ্যায়। এমপি হোস্টেলে থেকে সকালে খবরটি শুনে কত যে কেঁদেছি! আক্ষেপ জেগেছে, বঙ্গবন্ধুকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাবধান করেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে, পঁচাত্তরের ১১ আগস্ট বিকেলে গণভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, আমার কিছু একান্ত কথা আছে। সন্ধ্যার পর গণভবনের বাগানে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে জানতে চাইলেন, ‘কী বলতে চাস?’ আমি কিছু সন্দেহজনক ব্যাপার তাকে খুলে বললাম। বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, ‘একটু ঝামেলা ছিল, সব ঠিক হয়ে গেছে; চিন্তা করিস না।’ ফিরে এলাম আশ্বস্ত হয়ে। এটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা, শেষ কথা। এখন বুঝতে পারি, কোনো কিছুই ঠিক ছিল না তখন।

‘৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জে আয়োজিত আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করি। কিছুদিন পর গ্রেপ্তার হই। জেলখানার ভেতরেই জিয়াউর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পাঠান। বলা হয়েছিল, প্রস্তাবটি না মানলে ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারিনি বলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। জীবনভর বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে তার আদর্শ আঁকড়ে ধরেই থাকতে চেয়েছি। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া বাকি নেই। আমি শুধু চাই, এ দেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিরঞ্জীব থাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

জাতির পিতার চিন্তা-চেতনায় সব সময় কাজ করত বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন এ দেশের স্থপতি। ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তার নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন তার নাম এ দেশের লাখো কোটি মানুষের অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে জাতি হিসেবে আমরা যেমন বঙ্গবন্ধুর অবদান অক্ষয় করে রাখব, তেমনই আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির অঙ্গীকার নতুন করে শানিত করব। বঙ্গবন্ধু শত জেল-জুলুম সয়েও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন। একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত বাংলাদেশ গঠনে আমাদের সবার অবদানই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ঋণশোধের সামান্য প্রচেষ্টা।

‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের সার্বিক কর্মসূচিরও সাফল্য কামনা করি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি

সূত্র : দৈনিক সমকাল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *