হাওর বাংলা ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের যার। ব্যক্তি জীবনে একজন দিলখোলা-সদালাপী এবং হাস্যরসিকতায় উচ্ছল একজন মানুষ। দ্বিতীয় মেয়াদে যিনি আবারও দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানান, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। ইতোমধ্যে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি, দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আইন প্রণেতা, সিনিয়র রাজনীতিক, কূটনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় আবদুল হামিদকে দ্বিতীয় দফা রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ আবদুল হামিদের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এবং রাষ্ট্রপতি ওই মনোনয়নপত্রে সই করেন। পরে তা নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলে ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ২০১৩ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ।
সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় রাষ্ট্রপ্রধানের পদে ৭৪ বছর বয়সী আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়া ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
এবছর ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের বছরেই বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আবার বসছেন রাষ্ট্রপতির আসনে। আর তার উপরই ভরসা রাখছে আওয়ামী লীগ।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের পয়লা জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম হাজী মোঃ তায়েব উদ্দিন এবং মা মরহুমা তমিজা খাতুন।
জেলার নিকলী জিসি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করে গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হন।
১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। আবদুল হামিদ ১৯৬১ সালে কলেজ ছাত্র অবস্থায় আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর ৬২’র ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে।
১৯৬৩ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ১৯৬৫ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি এবং ১৯৬৬-৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের কারণে ১৯৬৮ সালে তিনি কারাবরণ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন আবদুল হামিদ। ৭১-এর মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কিশোরগঞ্জে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ মার্চ কিশোরগঞ্জ শহরের রথখোলা মাঠে ছাত্র জনসভায় হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন।
স্বাধীনতার পর তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সালে তৎকালীন সরকারের সময় তিনি কারারুদ্ধ হন। তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাঁচবার কিশোরগঞ্জ বার এসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন।
তিনি ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ সংসদ নির্বাচনী এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, ১৯৭২ সালে গণপরিষদ সদস্য, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে, ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০০১ সালের পয়লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন।
মো. আবদুল হামিদ সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত এ পদে দায়িত্বপালন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১২ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের পয়লা নভেম্বর থেকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।
তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে প্রথমে স্পিকার এবং রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হলেন এ ভাটির শার্দুল।
সুত্র : সারাবাংলা ডট নেট।