বিশেষ প্রতিনিধি : শারিরিক মেলামেশার পরও, বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে আত্মহত্যার পথ বেচে নেয় শান্তা আক্তার নামের কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। যার আগামীকাল অনুষ্ঠেয় এইসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবার কথা ছিলো। কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী শান্তা। কিন্তু; পরীক্ষায় অংশ নেয়ায় আগেই চলে যেতে হলো দুনিয়া ছেড়ে। টানা ৭দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ দুপুরে যায় শান্তা আক্তার। কিন্তু; কেন তার এভাবে চলে যাওয়া?
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মনকচুরী গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ মিয়ার মেয়ে কলেজ পড়ুয়া শান্তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো প্রতিবেশি লাল মিয়ার মাস্টার্স পড়ুয়া ছেলে মাইনুল হোসেনের। টানা ৪ বছর প্রেমের সম্পর্ক থাকার সুবাদে শান্তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বেশ কয়েকবার শারিরিক মেলামেশাও করে মাইনুল। এরমধ্যে মেয়ে বিয়ের জন্য প্রায়ই চাপ দিতো মাইনুলকে। কিন্তু; আজ না কাল করে দিন পার করছিলো মাইনুল। গেলো ২৫ মার্চ প্রেমিকাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পালিয়ে রাত্রি যাপন করে। পরে পারিবারিকভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করবে, এমন আশ্বাস দিয়ে মেয়েকে পরদিন ভোর সকালে বাড়িতে পাঠায়। বিষয়টি দুপক্ষের পরিবারও অবগত হয়। কিন্তু; বাড়িতে পাঠানোর পর থেকে কয়েক দফা শান্তার সাথে ফোনে ঝগড়া হয় মাইনুলের। এক পর্যায়ে শান্তাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়, বলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানায় প্রেমিক। এইকথা শুনে ২৬ মার্চ সকাল ৯টার দিকে নিজ ঘরে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে শান্তা। পরে থাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন।
নিহত শান্তার বড় ভাই মিজান জানান, ওড়না দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে, দেখে তার চাচী চিৎকার দিলে দ্রুত অন্য সদস্যরা নিচে নামিয়ে আনে। পরে সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় প্রেরণ করেন। কিন্তু; ঢাকা মেডিকেল কলেজে আইসিইউ বেড না পাওয়ায় থাকে ভর্তি করা জাপান-বাংলাদেশ ফেন্ডশীপ হাসপাতালে। সেখানে দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ভর্তি করা হয় সেন্টাল হসপিটালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আজ রবিবার দুপুরে মৃত্যু হয় শান্তা আক্তারের।
এ ব্যাপারে রশিদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, মাইনুল আর শান্তার প্রেমের বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস আগে দু’পরিবারের লোকজনদের নিয়ে দরবার শালিশ হয়। ছেলের পরিবার মেয়েকে বিয়ে করাতে রাজি নয়। ছেলে বিয়ে করতে পারবে না, এমন কথা শুনার পরই আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় মেয়েটি। লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছেও বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।
এ বিষয়ে রাতে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় বাবা ফিরোজ মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন বলেও জানিয়েছেন নিহত শান্তার ভাই মিজান মিয়া।
এদিকে, মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌছার পর থেকে ঘরে তালা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রেমিক মাইনুল ও তার পরিবারের সদস্যরা।