সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য দিল্লির আখড়া

প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য দিল্লির আখড়া

টিটু দাস : যেদিকে চোখ যায় গাছ আর গাছ। চারপাশ জুড়ে কয়েকশো হিজল গাছ। কোনো গাছ কোমর ডুবিয়ে, কোনোটা গলা পর্যন্ত আবার কোনো গাছ পুরোটাই জেগে আছে। দূর থেকে অনেকের মনে হবে হিজল গাছের বাগান। এ দৃশ্যটা কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য খ্যাত দিল্লির আখড়ার। এসব হিজল গাছ নিয়ে রয়েছে চমকপ্রদ কাহিনী। এইগুলো নাকি ছিল এক একটি দানব। নারায়ন গোস্বামী দানবগুলোকে হিজল গাছে রূপান্তর করেন।

বহু আগে হাওর এলাকার এই অংশটুকু খুব ভয়ের জায়গা ছিল, একেবারে গা ছমছমে! দিন-রাত যখনই হোক জলপথের এই অংশে নৌকা এলেই ডুবে যেত বা কোনো না কোনো সমস্যায় পড়ত। একবার দিল্লি থেকে আসা একটি নৌকা ডুবে গেল। নৌকা তো ডুবে গেলই, একজন সাপের কামড়ে মারাও গেল। দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের খাস নৌকা ছিল সেটি। হবিগঞ্জের বিথঙ্গল আখড়ার সাধক রামকৃষ্ণ গোস্বামীর কানে খবর গেলে তিনি তার প্রিয় শিষ্যকে নারায়ণ গোস্বামীকে এই এলাকায় পাঠান। নারায়ণ গোস্বামী বিথঙ্গল থেকে কাটখাল এসে ধ্যানে মগ্ন হলেন। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় প্রায়ই তিনি নিজেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হাওরের জলে আবিস্কার করতেন, নিজ ক্ষমতাবলে আবার সাধনাস্থলে ফিরেও আসতেন। পুরো এক সপ্তাহ একই ঘটনা ঘটার পর তিনি আশপাশে দৈব আওয়াজ শুনতে পান। তাদের কথা একটাই- এ জায়গা আমাদের, আপনি চলে যান। এবার সাধক তাদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চাইলে তারা স্বমূর্তি ধারণ করে। সাধক দেখতে পান বিশাল বিশাল দৈত্য তার সামনে দাঁড়িয়ে। শেষ পর্যন্ত দৈত্যকুলের সঙ্গে সাধকের রফাদফা হয়। সাধক ও দৈত্যকুল এখানে একসঙ্গে বসবাস করবেন। তবে দৈত্যকুল রূপান্তরিত হবেন একেকটা হিজল গাছে। দানব নেতা রাজি হওয়ার পাশাপাশি অনুরোধ করলেন সাধক নারায়ণ গোস্বামী যেন তার গাছতলায় বসে সাধনা করেন, সাধক তার সে কথায় সম্মতি দেন। সেই থেকে বিশেষ হিজল গাছটি শান বাঁধানো অবস্থায় এখনও রয়েছে। প্রতি অমাবস্যার রাতে সেখানে ভোগ দেওয়া হয়।

যা হোক, পরবর্তী সময় এ ঘটনা দিল্লির সম্রাটের কানে গেলে সম্রাট জাহাঙ্গীর ১২১২ সালে আখড়ার নামে একটি তামার পাত্রে ওই জমি লিখে দেন বা দান করেন। সেই থেকে আখড়ার নাম হয় দিল্লির আখড়া।

খড়ার ভেতরে রয়েছে আধ্যাত্মিক সাধক নারায়ণ গোস্বামী ও তার শিষ্য গঙ্গারাম গোস্বামীর সমাধি, ধর্মশালা, নাটমন্দির, অতিথিশালা, পাকশালা ও বৈষ্ণবদের থাকার ঘর ।

প্রতিবছর চৈত্র মাসে এখানে মেলা বসে। মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের নানা অঞ্চলের মানুষের সমাবেশ দেখা যায়। এ ছাড়া প্রতি অমাবস্যা এবং পূর্ণিমার রাতে এখানে ভোগ দেওয়া হয়।

তবে বর্ষায় যাতায়তের সুবিধার কারণে প্রতিদিন পর্যটকরা ঐতিহাসিক দিল্লির আখড়া দেখতে ভীড় করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *