সর্বশেষ
প্রচ্ছদ / হাওরাঞ্চল / কিশোরগঞ্জ / কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে অ্যাম্বুলেন্স নিজেই রোগী! উদাসীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে অ্যাম্বুলেন্স নিজেই রোগী! উদাসীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

তোফায়েল আহমেদ : কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি এখন নিজেই রোগী। অষ্টগ্রাম উপজেলাটি কিশোরগঞ্জ জেলার একটি হাওর বেষ্টিত উপজেলা। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃ পক্ষের উদাসীনতায় এক বছর যেতে না যেতেই নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যার কারণে স্বাস্থ্য সেবায় আগের অবস্থা ফিরে এসেছে বলে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মহোদয় হাওর উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকও হাওরের স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও শিক্ষা খাত উন্নয়ন করার লক্ষ্যে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছেন। সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকও এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন বলেও এলাকাবাসীরা জানান।

দুঃখ প্রকাশ করে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের উন্নয়নে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ রোগীদের যাতায়াতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অ্যাম্বুলেন্স আছে ঠিকই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় এসব জিনিস নষ্ট হয়ে যায়। এর আগেও এই হাসপাতালে নৌ অ্যাম্বুলেন্স ছিল। কিন্তু তাদের অবহেলায় এক বছর না যেতেই অ্যাম্বুলেন্সগুলো অকেজো হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে গর্ভবতী মহিলা, বৃদ্ধ ও মূমুর্ষ শিশু রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরের হাসপাতালগুলোতে নিতে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়ে। অনেকসময় রোগীদের হাসাপাতালে নেওয়ার পথেই তারা মৃত্যুবরণ করেন।

নৌ অ্যাম্বুলেন্স বিষয়ে চাকুরজীবি সামিউর রহমান ছোটন জানান, নামে মাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকে হাসপাতালটিতে। সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল না থাকায় হাসপাতালের বেহাল দশা। কয়েকবছর পর পরই নৌ অ্যাম্বুলেন্স আনা হয়। কিন্তু বছর ঘুরে না, আবার পুরোনো অবস্থা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নৌ অ্যাম্বুলেন্স টি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, সমালোচনা। মনোয়ার হোসাইন ভূইয়া পুলক নামের এক ব্যাক্তি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন- “আমরা আহত বা অসুস্থ হলে এই নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দিয়ে আমাদের হাসপাতালে নেওয়ার কথা। এখন বেচারা নিজেই আহত!
আকাইদ নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন- “কর্তৃপক্ষের অবহেলা এর জন্য দায়ী, দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করা হোক”।
রুবেল প্রধান নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন- “প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার নৌ অ্যাম্বুলেন্সটির বেহাল দশা, কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখার জোর দাবী জানাচ্ছি”।

নারী নেত্রী ও শিক্ষিকা সৈয়দা নাসিমা রীতা আক্ষেপ করে বলেন, স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। অষ্টগ্রাম উপজেলাটি হাওর উপজেলা হওয়ায় স্বাস্থ্যখাতে একসময় পিছিয়ে ছিল। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অষ্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবা এখন উন্নত। গত বছর নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে হাওরের হাসপাতালে প্রদান করেন। কিন্তু এটির বেহাল দশা আমাদের মর্মাহত করেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো দরকার। তা না হলে স্বাস্থ্য সেবায় হাওরের মানুষ আবারো পিছিয়ে পড়বে।

অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি আনার কিছুদিন পরই অকেজো হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত কেউ সুবিধা ভোগ করেছে বলে জানা নেই। কিছুদিন ধরে এটি উল্টে পড়ে আছে। আমি এ বিষয়ে অভিযোগ করবো।

এ ব্যাপারে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ ইসহাক বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছি কয়েক মাস দুয়েক হয়েছে। নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালে আসার কয়েক দিনের মাঝেই কে বা কারা অ্যাম্বুলেন্সটির দু’টি ব্যাটারী চুরি করে নিয়ে যায়। চুরির ঘটনায় অষ্টগ্রাম মডেল থানায় জিডিও করা হয়েছে। হাওরে পানি না থাকায় নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি কিছুটা হেলে পরেছে। এটাকে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করবো। হাসপাতালের সামনে পানি না থাকায় এটিকে থানার সামনের ঘাটে রাখা হয়। কিন্তু এখন থানার সামনেও পানি নেই। রাখতে হবে আট কিলোমিটার দূরে বাঙ্গালপাড়া ঘাটে। সেখানে রাখলে কে দেখাশুনা করবে তা নিয়েও চিন্তিত আছি।

হাসপাতালের জনবল নিয়ে তিনি জানান, নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি চালানোর মতো চালক নেই। একজন আছে সেও এখন আসে না। বিগত ৭ মাস ধরে তার বেতন বন্ধ, তাই আসে না। জনবল নিয়োগের জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। অ্যাম্বুলেন্সটি দ্রুত মেরামত করার ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনান, ব্যাটারী চুরি হওয়া নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো জিডি করা হয়েছে কিনা আমার অবগতিতে নেই। নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি বিষয়ে হাসপাতালের কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমি বারবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের বলেছি অ্যাম্বুলেন্সটির তদারকি করার জন্য। তাদের বেখেয়ালিপনায় এসব সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয় প্রতি বছর যা দুঃখজনক।

উল্রেখ্য এ এলাকার প্রায় দুই লক্ষ লোকের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। হাওরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত মুমূর্ষু রোগীদের স্বল্প সময়ে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত বছর ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন। গত বছর ১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের মাননীয় সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক রোগীদের স্বাস্থ্য উন্নত ও দ্রুত স্বাস্থ্য সেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্সটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *