খায়রুল আলম ফয়সাল : ৯৯৯-এ ফোন করে ডাকাতের কবল থেকে রক্ষা পেল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ১৪ শিক্ষার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে গভীর হাওর থেকে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদে কিশোরগঞ্জ পৌঁছে দেয়। তাঁদের মধ্যে ১২জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও দুজন গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ছাত্র।
কিশোরগঞ্জের চামড়াঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ১৪ জন শিক্ষার্থী হাওরের অলওয়েদার সড়কে ঘুরতে যায়। তারা করিমগঞ্জের বালিখলা থেকে একটি ট্রলার ভাড়া করে মিঠামইনে নেমে অলওয়েদার সড়কে ঘোরাঘুরি করে। সন্ধ্যার পর সেখান থেকে ফেরার পথে প্রচন্ড- বাতাসে হাসানপুর সেতু ও ডুবি গ্রামের কাছে তাদের বহনকরী ট্রলারটি রাত নয়টার দিকে আটকে যায়। অনেক চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীরা তাদের বহনকারী ট্রলারটিকে ভাসাতে পারছিলেন না। এ সময় সেখানে ডাকতদের একটি দল তাদের ঘিরে ফেলে। চারদিক থেকে টর্চের আলো ফেলে হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকে। তখন শিক্ষার্থীদের কেউ একজন ৯৯৯-এ ফোন করে তাদের উদ্ধারে পুলিশের কাছে সাহায্য চায়। বিষয়টি জানানো হয় করিমগঞ্জের চামড়াঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়িকে।
চামড়াঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মোহাম্মদ এনামুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর ডাকাতদল ওই এলাকা থেকে সটকে পড়ে। পরে সম্মিলিত চেষ্টায় ট্রলারটি ভাসানো হয়। সবাইকে নিয়ে রাত ১২টার দিকে তারা বালিখলা পৌঁছে। রাত একটার দিকে তাদের কিশোরগঞ্জের একটি হোটেলে নিরাপদে পৌঁছে দেয় পুলিশ।
এএসআই মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, শিক্ষার্থীদের একটি দল হাওরে আটকে আছে, এমন সংবাদ পাওয়ার পর আমি তাৎক্ষণিকভাবে চারজন কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ছাত্রদের ঘিরে ধরা ডাকাতদল পালিয়ে যায়। এ সময় ভয়ে পানিতে পড়ে যাওয়া দুজন শিক্ষর্থীকে উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, ট্রলারে মোট ১৪জন শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে ১২জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীও দুজন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ছাত্র।
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, তাঁদের নিয়ে বালিখলা পৌঁছার পর রাত একটা- দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে কিশোরগঞ্জ শহরে একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আজ শুক্রবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। তবে আরেকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা পরিবারের কাউকে বলে ঘুরতে যাননি। তাদের দলে কয়েকজন ছাত্রীও ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ছাত্রীদের পরিবার পক্ষ থেকে চাপ তৈরি হতে পারে-এমন দুর্ভাবনায় থেকে বিষয়টি গোপন রাখতে চান তারা। এ কারণে গণমাধ্যমে কিছু বলছেন না। তিনি বলেন, পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় আমরা সবাই সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। চারদিক থেকে ডাকাতদলের টর্চের আলো, আমাদের ঘিরে ফেলা-এসব দেখে অনেকে কান্নাকাটি করতে থাকে। ভয়ে কেউ কেউ পানিতে লাফিয়ে পড়েন। একটা ভয়ানক মানসিক চাপে পড়ে গিয়েছিলাম আমরা।