নিজস্ব সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে সালিস থেকে ফেরার পথে প্রতিপক্ষের লোকজন নাজমুল হুদা (৩০) নামে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
আজ বুধবার (৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের পশ্চিম কান্দাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নাজমুল হুদা পশ্চিম কান্দাইল কামারহাটিয়া গ্রামের মৃত মজলু খানের ছেলে। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। নাজমুল হুদা ঢাকায় থাকতেন। ঈদে তিনি বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। করিমগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, ঈদের দিন বিকেলে গ্রামীণ মেলায় স্থানীয় মৌলভীবাজারে কিশোরদের দুটি পক্ষের ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে তা দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। সেই ঝগড়ার বিষয়টি মীমাংসার জন্য ওই বাজারে সকালে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিসে বসেন। সালিসে বিরোধ মোটামুটি মীমাংসা হয়। তবে সালিস শেষ হওয়ার পর সবাই যখন বাড়িতে ফিরছিলেন তখন স্থানীয় ঈদগাহের সামনে ওই এলাকার হক্কু মিয়ার ছেলে সবুজ মিয়া (৫০), কিরণ মিয়ার ছেলে সাকা মিয়া ও ময়না মিয়ার ছেলে উজিরের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন ইমরান নামে এক যুবককে ঘিরে ধরে মারধর করতে থাকে। তখন ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল এমরানকে বাঁচাতে গেলে সবুজ মিয়া নাজমুলকে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় আরো কয়েকজন নাজমুলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে জখম হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার যান তিনি।
নিহত নাজমুলের চাচাতো ভাই নয়ন মিয়ার অভিযোগ, ঘটনার পর পুলিশ সবুজকে আটক করে। তবে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লিঙ্কন মিয়ার নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক তাকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনা এলাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
বিষয়টি জানার জন্য ইউপি সদস্যের খোঁজ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া তাকে ফোন করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম কান্দাইল গ্রামে যেখানে নাজমুলকে ধরাধরি করে এলাকাবাসী নিয়ে আসে ঠিক সেখানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। পুলিশ জায়গাটিকে ঘিরে আছে। স্থানীয় লোকজন রক্ত জমাট বাঁধার জায়গাটি দেখছিল।
নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের শত শত মানুষ ভিড় করছেন সেখানে। মা নাদিরা বেগম ও বোন সোমা আক্তার বিলাপ করছিলেন। তাদের বিলাপ দেখে এলাকাবাসীর অনেককে তখনো চোখের পানি ফেলতে দেখা যায়। এ সময় তারা বলেন, নাজমুলের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা। নইলে এ ধরনের ঘটনা গ্রামে ঘটতেই থাকবে।
এ ঘটনার পর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আর যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনায় জিল্লু নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত নাজমুলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।